সহানুভূতি পেতে বিএনপি প্রায়ই কূটনৈতিক মিশন এবং বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করে বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে কূটনীতিকদের অবহিত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারের তিন মন্ত্রী ও এক উপদেষ্টা। পরে বিকেল ৪টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
কূটনীতিকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, সহানুভূতি পাওয়ার জন্য বিএনপি প্রায়ই কূটনৈতিক মিশন এবং আমাদের বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করে। এবার হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম বিএনপির কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের পাশে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তথাকথিত এক উপদেষ্টা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। পরে জানা যায় তিনি একজন প্রতারক এবং তিনি স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতারা তাকে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্ররোচিত করেছেন।
এসময় সংবিধানের আলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সময়মতো অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
মোমেন বলেন, আগামীকাল থেকে তিনদিন দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। আমরা কেবল নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির ওপর আক্রমণ আশা করি না। তবে, আইনশৃঙ্খলার দিকটি ছাড়াও হরতাল এবং অবরোধের একটি অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকও রয়েছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হরতাল-অবরোধে সারাদেশে ১ হাজার ৬০০ কোটি (ইউএসডি ১৯২.৩ মিলিয়ন) টাকার ক্ষয়ক্ষতি, যা জিডিপির ০.২ শতাংশ।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সব দলমত নির্বিশেষ রাজনৈতিক কর্মসূচি করার সুযোগ পাচ্ছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে কারও বক্তব্য দেওয়ায় বাধা ছিল না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো দলের না। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শান্তির নামে তারা প্রলয়ঙ্কারী ঘটনা ঘটায়। পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করা জাতির জন্য লজ্জার। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ অস্বাভাবিক। এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত। বিএনপির লোকেরা দেশে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে। আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হয়। এ সরকার শাসনতন্ত্র অনুযায়ী চলছে। রামরাজত্ব কায়েম করে কোনোকিছু হাসিল হবে না। দুই দিনের সহিংসতার কথা রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধার হয়েছে। কীভাবে বিএনপি জো বাইডেনের নকল উপদেষ্টা বানিয়ে দুর্নাম করছে সেটি জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গণমাধ্যমে আসা তথ্যের ওপর তাদের ব্রিফ করা হয়েছে। অভিব্যক্তিতে স্তব্ধ হয়ে গেছেন কূটনীতিকরা। তাদের পুরো তথ্য লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। সাতটি রাষ্ট্র মিলে যে বিবৃতি দিয়েছে, অতীতের বিবৃতির সঙ্গে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সব রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে এলে প্রচলিত সব বিধিনিষেধ মেনে আসতে হবে। তবে আগ বাড়িয়ে বিবৃতি দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নীরবতার অর্থ পুরোপুরি একমত হওয়া নয়। সরকারের বক্তব্য তাদের জানানো হয়েছিল। ওনাদের কাছ থেকে কোনো বিবৃতি আশা করি না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।