দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টিতে (জাপা) অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষত দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন এবং জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার বিষয়ে দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এবং দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে। তাই নিজ নিজ ক্ষমতা জানান দিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছেন তারা।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) জিএম কাদেরের পক্ষে দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তাতে বলা হয়, আপনাকে জানানো যাচ্ছে যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। চিঠিতে তার ৪টি নমুনা স্বাক্ষরও যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
তবে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জিএম কাদের অংশ বলেছে, তারা নির্বাচনে যাবে কি না এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এদিকে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে উল্লেখ করে ইসিকে আরেকটি চিঠি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি হবে শুধু নির্বাচনি জোট। জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক লাঙ্গল কিংবা প্রার্থীর ইচ্ছানুসারে মহাজোটে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।
রওশন এরশাদের চিঠি জমা দেন মুখপাত্র দাবি করা কাজী মামুনুর রশীদ। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির প্রধান উপদেষ্টা ও বিরোধীদলীয় নেতা আজকে নির্বাচন কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তার দল জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির অন্য কোনো অংশ বলতে কিছু নেই। সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদই জাতীয় পার্টি। তিনি যেখানে আছেন সেটিই মূলত জাতীয় পার্টি।
মনোনয়ন কার স্বাক্ষরে হবে, চেয়ারম্যান নাকি বিরোধীদলীয় নেতা- এমন প্রশ্নের জবাবে মামুনুর রশীদ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির যিনি প্রধান পৃষ্ঠপোষক এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যিনি কনভেনর তিনিই স্বাক্ষর করবেন। কারণ, আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, প্রধান পৃষ্ঠপোষক দলের সর্বময় ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বসম্পন্ন।
তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বাসায় গতকাল (শুক্রবার) রাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জিএম কাদেরও এই নির্বাচনে নিশ্চয়ই অংশগ্রহণ করবেন। আর না হলে উনি রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাবেন।
এর আগে, এক ভিডিও বার্তায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এখন পর্যন্ত সংলাপের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। বিএনপিও সংলাপের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেনি, সরকারি দলও সংলাপ প্রত্যাখান করেছে। এরকম অবস্থায় জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি না এ প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী ২-১ দিনের মধ্যে আমরা জাতীয় পার্টির সিনিয়র নেতারা, প্রয়োজনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মিটিং ডেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।