১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এবার ৫২তম বিজয় উদযাপন করবে পুরো জাতি। যাদের রক্তে অর্জিত এই বিজয় জাতির সেই সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত করতে ধুয়ে-মুছে রঙ তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। চারস্তুরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়াসহ জোরদার করা হয়েছে সকল কার্যক্রম।
দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালি জাতির স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। ১৬ই ডিসেম্বর ভোরের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নাম না জানা লাখো শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্যরা। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হবে তিন বাহিনীর গার্ড অব অনার। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জনসাধারণের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পরে সেখানে শ্রদ্ধা জানাবেন বিএনপি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সরেজমিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙণে গিয়ে দেখা যায়, বাহারি ফুলের সমারোহে সাজিয়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙণ। ধুয়ে-মুছে পুরো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। লাল ইটে সাদা রঙের ছোঁয়া শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে লাল টবে শোভা পাচ্ছে বাহারি ফুল গাছ। লেকের পানিতে নতুন করে রোপণ করা হয়েছে লাল শাপলা। এছাড়া স্মৃতিসৌধ এলাকার সড়কগুলোতে বাহারি রঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। একইসঙ্গে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। সেইসঙ্গে সাদা পোশাকে রয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মহান বিজয় দিবসে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন সুধীমণ্ডলী এবং সর্বসাধারণ সেদিন যারা আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধে আত্মত্যাগ করেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সাভার স্মৃতিসৌধে আগমন করবেন। তাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চারস্তরের নিরাপত্তরা নিশ্চিত করেছি।
তিনি বলেন, আশপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যারা এলাকার অধিবাসী তাদের সকলের সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি। আমরা তাদেরক বলে রেখেছি বহিরাগত যদি কেউ আপনাদের এলাকায় অবস্থান করে আমাদের অবহিত করার জন্য। সেইসঙ্গে আমরা গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখছি। সেদিন যেহেতু প্রথম প্রহরে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবেন। সেহেতু তাদের নিরাপত্তার জন্য ভোর চারটা থেকে এই এলাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছি। যেহেতু এখানে সর্বসাধারণ আসবেন, ব্যাপক জমায়েত থাকবে সে কারণে আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে যে গাড়িগুলো আসে তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে তারা যেন চন্দ্রা-গাজীপুর হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। যারা মানিকগঞ্জ থেকে আসবে তাদের প্রতিও আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন নবীনগর মোড় হয়ে আশুলিয়া হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। ঢাকা থেকে যারা মানিকগঞ্জ এবং উত্তরবঙ্গ যাবেন তারা যেন গাবতলী-বেঁড়িবাদ হয়ে অথবা উত্তরা-আশুলিয়া হয়ে চলে যান।
পুলিশ সুপার এ সময় বলেন, আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত ঢাকা জেলা পুলিশ। এখানে সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট নেই। তারপরেও আমরা সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সকল ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে এবং আমরা আশা করছি অত্যান্ত ভাবগম্ভীর ও উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস উদযাপিত হবে।
গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গত ২ মাস ধরে চলা জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিচ্ছন্নতার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। ফুল দিয়ে সাজানো, লেক সংস্কার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব কাজ শেষ।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত-বিভাগের উপ প্রকৌশলী মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, এবার বিজয় দিবস উদযাপনে স্মৃতিসৌধকে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। নতুন নতুন ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে। এক মাস নিরলস পরিশ্রম করে সৌন্দর্যবর্ধনের সকল কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি দিয়ে। স্মৃতিসৌধের ভেতরে বিভিন্ন রঙের আলোকবাতি সংযোজন ছাড়াও ফুল গাছসহ শোভাবর্ধক গাছ নতুন করে দেওয়া হয়েছে। স্মৃতিসৌধের ৮৪ একর জমি জুড়েই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপণা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ডিস্মেবর মাস বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্মৃতিসৌধ তৈরি করেন। এখানে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের দিন ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা, সংসদ সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং দেশের আপামর জনসাধারণ এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এবারও ১৬ ডিসেম্বর বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সকলেই আসবেন। সেজন্য স্মৃতিসৌধের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ফুলে এবং পাতায় ভরে গেছে স্মৃতিসৌধ প্রাঙন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে এখানে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এখানে কোন নাশকতার সম্ভাবনা দেখছি না। প্রতি বছরের মতো এখানে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে স্মৃতিসৌধের যে আনুষ্ঠানিকতা তা সম্পন্ন করতে পারব।