শীত যাই যাই করছে, তবুও সবজির বাজারে অস্থিরতা কমেনি। সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। অন্যদিকে মুরগির খাবারের দাম বাড়ার ‘অজুহাতে’ ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। একইসঙ্গে চলতি সপ্তাহে মাছের দামও ঊর্ধ্বমুখীভাব দেখা গেছে। এ ছাড়াও দামে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। শুক্রবার (০২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সবজির বাজার
শীতকালীন সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে। মৌসুম শেষে হয়ে যাওয়ার ‘অজুহাতে’ শীতকালীন প্রতিটি সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে নতুন আলুর ছড়াছড়ি থাকলেও দাম কমছে না। ৫০-৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। চড়া বাজারে নতুন পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা, পুরাতন পেঁয়াজ দেশি ১২০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
স্থান ও মানভেদে ভেদে পাকা টমেটোর কেজি ৭০ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, কাঁচা টমেটো ৫০-৬০ টাকা। করলা ৭০-৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ঢেঁড়স ১০০-১১০ টাকা, বিভিন্ন জাতের বেগুন ৮০-৯০ টাকা, মূলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ১০০-১২০ টাকা ও কাঁচা পেঁপে ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
স্থান ও মানভেদে কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৯০ টাকা, শিম ৭০-৯০ টাকা, ঝিঙা ৮০-৯০, কচুর লতি ৭০-১০০ টাকা, কচুর মুখী ১০০-১২০ টাকা, গাজর ২০-৪০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা ও কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।
আকারভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ৩০ থেকে ৭০ টাকা, স্থানভেদে কিছুটা কম-বেশিও বিক্রি হচ্ছে। লাল শাকের আঁটি ২০ টাকা, লাউ শাক ৩০-৪০ টাকা, মূলা শাক ২০-২৫ টাকা, পালং শাক ২৫-৩০ টাকা, কলমি শাক ১৫-২০ টাকা আঁটি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
মাছের বাজার
সপ্তাহ ব্যবধানে সব ধরনের মাছের দাম বেড়েছে। বাজারগুলোতে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, এক কেজি চাষের শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছ দাম বেড়ে (আকারভেদে) হয়েছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি কেজি মাগুর মাছ ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায়, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৪০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়াও বাতাসি-টেংরা ১ হাজার ৬০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৬০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দেশি কই ১ হাজার টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, আড়ই মাছ ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের বাজার
কিছুদিন আগেও ডিমের বাজারে অস্থিরতা ছিল। এরপর দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও ফের খুচরা দোকানে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। একটি ডিম ১৩ টাকা দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। সে হিসাবে ডজন পড়ছে ১৫৬ টাকা। তবে বড় বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৪৫ টাকায় মিলছে।
পাইকারি ডিম বিক্রেতারা জানান, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, শীতকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের হার বাড়ায় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দুইয়ে মিলে ডিমের দাম বাড়ছে।
চলতি সপ্তাহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে উত্তপ্ত ছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। জানুয়ারি মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম ৮০ টাকায় মধ্যে নেমে আসে। মাসের শেষে নতুন করে বাজারে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে বেশিরভাগ দোকানেই নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। পুরোনোর কেজি ৯০ টাকা। তবে বড় বাজারে ৮০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।
এ ছাড়া মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সরকার গরুর মাংসের দাম ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও কথা শুনছে না কেউ। নিজেদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে বর্তমানে ৭৫০ টাকা কেজি, কোথাও আরও বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লেয়ার ও সোনালি জাতের মুরগির কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে স্থানভেদে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি এবং খাসির মাংস আগের মতোই ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে চলতি সপ্তাগে চালের দাম ৬ টাকা বেড়ে এখন ২-৩ টাকা কমেছে: ভোটের সময় সারাদেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল চালের দাম। সে সময় প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ে। এরপর গত দুই সপ্তাহ সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর।
যার ফলে কোথাও কোথাও ধান ও চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগেই উচ্চমূল্যে থাকা চালের দাম কমেছে সামান্যই। বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে সাড়ে ৬ টাকা বাড়লেও অভিযানের পর কমেছে ২ টাকা।