সাহাবায়ে কেরাম পারস্পরিক সহানুভূতিশীল ছিলেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাদের এ গুণের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তাঁর সঙ্গে যারা আছে তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল।’ (সুরা ফাতহ, আয়াত : ২৯)
কোমলতা ও নম্রতা আল্লাহ তাআলার পছন্দনীয় গুণ। আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ও নম্র। তিনি কোমলতা ও নম্রতা পছন্দ করেন। আর তিনি নম্রতার কারণে যা দান করেন, তা কঠোরতা কিংবা অন্যকোনো কারণে দান করেন না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯২৭)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি কোমলতা ও নম্রতা নিজের জন্য আবশ্যক করে নাও। কঠোরতা ও নির্লজ্জতা থেকে নিজেকে বাঁচাও। যে জিনিসে নম্রতা ও কোমলতা থাকে, সেটাই তার সেৌন্দর্যের প্রতীক হয়। আর যে জিনিস হতে তা প্রত্যাহার করা হয়, তা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’ (মিশকাত, হাদিস : ৪৩১)
এ আয়াতে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়-
এক. এখানে কোমলতা ও নম্রতাকে আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এখান থেকে বুঝা গেল, নম্র ও কোমল কেবল সে ব্যক্তিই হতে পারে, যার মধ্যে আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত রয়েছে।
দুই. রাসুল (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, এই কোমলতা, সদ্ব্যবহার, ক্ষমা প্রদর্শন, দয়া ও করুণা করার গুণ যদি আপনার মধ্যে না থাকত, তাহলে মানুষের সংশোধনের যে দায়িত্ব আপনার উপর অর্পণ করা হয়েছে তা যথাযথভাবে সম্পাদিত হতো না। মানুষ আপনার মাধ্যমে আত্মসংশোধন ও চারিত্রিক সংস্কার সাধনের উপকরিতা লাভ করার পরিবর্তে আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতো। সুতরাং এখান থেকে বুঝা যায়, কাউকে কোমল ও নম্র আচরণে যতটা সংশোধন করা যায়, কঠোর আচরণে তা করা যায় না। এবং কঠোর আচরণের দ্বারা আশপাশের মানুষজন ধীরে ধীরে ব্যক্তি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, দূরে সরে যায়। তাই মানুষের ভালোবাসা পেতে হলে কোমল আচরণের অধিকারী হওয়া অত্যাবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের নম্র ও কোমল হূদয় দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ
রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।