বেইজিং ঘোষণা ৩০ বছর পূর্তি ও নারী দিবস কনফারেন্স উদ্বোধন

গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে (বেগম রোকেয়া স্মরণী, আগারগাঁও, ঢাকা) সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে এবং ইউএন উইমেনের সহযোগিতায় বেইজিং ঘোষণা ও কর্মপরিকল্পনার ত্রিশ বছর পূর্তিতে নারী সমাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্যে এক কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিজেরা করি-এর সমন্বয়ক খুশি কবির। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএন উইমেন বাংলাদেশ এর প্রতিনিধি গীতাঞ্জলি সিং, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম, এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলারা বেগম। অনুষ্ঠানটির শুরুতে শফি মন্ডল ও তার দলের বাউল সংগীত পরিবেশন করা হয়। মডারেটর খুশি কবির তার বক্তৃতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন এবং বলেন, বেইজিং সম্মেলন নারী আন্দোলনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যেখানে নারীর অগ্রযাত্রার পথে আমাদের কতটুকু অগ্রসর হতে পেরেছি এবং আরও কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে, সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে। গীতাঞ্জলি সিং বলেন, নারী আন্দোলন নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বেইজিং ঘোষণা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি ভিশনারি এজেন্ডা হিসেবে কাজ করছে। ৩০ বছর পরও নারীর প্রতি সহিংসতা এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে নারীর প্রতিনিধিত্ব কম থাকা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, বেইজিং ঘোষণার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল বিষয় হল সমতা, প্রতিষ্ঠা এবং অগ্রগতি উদযাপন। তিনি উল্লেখ করেন যে, যদিও নারী প্রতি সহিংসতা বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান, তবে নারীর শক্তি এখন দৃশ্যমান। এই শক্তিকে এগিয়ে নিতে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

দিলারা বেগম বলেন, বেইজিং ঘোষণার ৩০ বছর পূর্তিতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অনেক অর্জন হলেও, এখনো নানা সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান। তিনি বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বিশেষত পারিবারিক সহিংসতা কমেনি এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

উদ্বোধনী পর্ব শেষে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন পেশার নারী নেতৃবৃন্দ, যেমন আদিবাসী নারী প্রতিনিধি চন্দ্রা ত্রিপুরা, নারী কৃষক মমতাজ বেগম, দলিত নারী মনি রানী দাস, বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন নারী শারমিন আকবরী, শিক্ষার্থী শারমিন মিতু, গার্মেন্টস কর্মী সুমি আক্তার এবং নারী উদ্যোক্তা তাহমিনা পারভিন শ্যামলী।

বক্তারা বলেন, নারীরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে তারা সব বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম। বিশেষ করে দলিত, আদিবাসী এবং ট্রান্সজেন্ডার নারীরা সমাজে জেন্ডার বৈষম্যের শিকার হলেও, তাদের সচেতন হতে হবে এবং সব পেছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্যানেল আলোচনায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা হয়। বক্তারা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা, পারিবারিক সহিংসতা, ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন এখনো বিদ্যমান। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, জাতীয় হটলাইন নম্বরের কার্যকারিতা এবং সাইবার অপরাধ দমনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়।

কনফারেন্সে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্য এবং মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন, মোট পাঁচশতাধিক জন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ