রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের আশা নিয়ে নতুন বছরের প্রথম দিন শুরু হয় বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর। প্রথম দিকে তেমন একটা সাড়া না মিললেও মাসের এক তৃতীয়াংশ পেরিয়ে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মেলা। গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। সেইসঙ্গে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও কনসার্ট আয়োজনে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।
আয়োজক ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী, মেলায় লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে শুক্রবার। এ ধারাবাহিকতায় আজ শনিবারের (১১ জানুয়ারি) সাপ্তাহিক ছুটিতেও মেলায় এমন জনসমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা তাদের। এরই মধ্যে দুপুর থেকে হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীকে মেলায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়বে, বলছেন আয়োজক ও ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, স্টলে-স্টলে চলছে হরেক রকমের অফার। হাঁক-ডাকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন কর্মীরা। বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩৬২টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল বসানো হয়েছে এবারের মেলায়। এর মধ্যে ৩৫১টিই দেশীয় প্রতিষ্ঠানের স্টল-প্যাভিলিয়ন। বাকি ১১টি স্টল ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়া—এই ৭ দেশের।
এছাড়া, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকে প্রাধান্য দিয়ে এবারের বাণিজ্য মেলায় স্থান পেয়েছে জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর ও তারুণ্যের প্যাভিলিয়ন। ই-টিকিটের ব্যবস্থা থাকায় প্রবেশ পথে রয়েছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
মেলায় বেশি ভিড় চোখে পড়েছে গৃহস্থালি পণ্যের স্টলগুলোতে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার মেলায় বিভিন্ন মান ও ডিজাইনের গৃহস্থালি পণ্য এসেছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা রকম ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। এতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা।
অবশ্য, ছাড়ের পরও পণ্যের দাম বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। অনেক ক্রেতাই বলছেন, গৃহস্থালি পণ্যের চাহিদা সবসময় থাকে। কারণ এসব পণ্য দৈনন্দিন কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে, এবার দাম অনেকটাই বেশি।
প্রথমবারের মতো এবারই অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির স্টল বা প্যাভিলিয়ন স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মেলায়। এছাড়া মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে বিশেষ ছাড়ে উবার সার্ভিস।
মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর বা পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে এ বছর। বিদেশি উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে রাখা হয়েছে স্বতন্ত্র সোর্সিং কর্নার, ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। বয়সভিত্তিক দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে প্রযুক্তি কর্নার, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় রয়েছে শিশু পার্কও।
মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন চলবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক ছুটির দিন খোলা থাকবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা এবং ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তাদের কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন।