মলয় বিকাশ দেবনাথ ॥
শনিবার মহান একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা, বরেণ্য সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়া হয়। সেখানে দুপুর ১টার দিকে মরদেহ শহীদ মিনারে পৌঁছালে পুলিশের একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো গাফ্ফার চৌধুরীর কফিন রাখা হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার বেদীতে।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জে. এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, নুরুল ইসলাম নাহিদ, জাহাঙ্গীর কবির নানক। একে একে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, দীপু মনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আরো উপস্থিত হন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মাদ সামাদ, উপ-উপাচার্য ( শিক্ষা) অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ অনেকে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রশ্ন তুলেন, বিএনপিকে শহীদ মিনারে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনে দেখা যায়নি। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।
এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামানসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক- রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এই জানাজায় অংশ নেন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায়। জানাজা শেষে জাতীয় প্রেস ক্লাব, সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তি এবং সিনিয়র সাংবাদিকরা শ্রদ্ধা জানান।
এরপর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মিরপুরের শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার স্ত্রী সেলিমা আফরোজ চৌধুরীর পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর দাফন শেষে উনার রুহের মাগফেরাত কামনা করে উপস্থিত সকলে মোনাজাতে অংশ নেন। এসময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলামের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা, ওয়ার্ড ৪ এর কাউন্সিলর মোঃ জামাল মোস্তফা, ওয়ার্ড ৮ এর কাউন্সিলর মোঃ আবুল কাসেম মোল্লা (আকাশ) এবং ওয়ার্ড ১২ এর কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। দাফন শেষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখনী বিশেষ করে, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বাঙালির চিরকালীন অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বাংলা, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে চির অম্লান হয়ে থাকবেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।’
উল্লেখ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯ মে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি।