মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি
বাঙালির আত্নবিশ্বাস আর অদম্য সাহসের প্রতীক পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে আগামী ২৫ জুন। ওই দিনই যান চলাচল শুরু হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় দক্ষিন বাংলাসহ গোটা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কখন সময়ের সাহসের সারথি ফিতা কাটবেন। সেতুর দুই পাড়ে চলছে নানান আনন্দ আয়োজন। বিশেষ করে জাজিরা ফ্রন্টের জনগন রীতিমত বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছেন এখন থেকেই। দক্ষিন বাংলার ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোরের মানুষ বা মালবাহী জাহাজ ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলে যেতে হলে কেবল পদ্মা ফেরিতেই কাটাতে হত ২ থেকে আড়াই ঘন্টা। দুই পাশের সড়কও ভালো ছিলনা। আর আজ দুই পাশের রাস্তা যেন একেকটি রানওয়ে। ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিতে যেতেও সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। খুনী মিলিটারি জিয়া- বেঈমান মুশতাক বঙ্গবন্ধুকে ঢাকায় দাফন করতে দেয়নি এ জন্যে যে, তাতে বঙ্গবন্ধুর সমাধি হবে বাঙালি তথা বহির্বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের শ্রদ্ধার কেন্দ্র। অথচ মিলিটারি জিয়াউর রহমানের মাজার বানানো হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এলাকার ডিজাইন ভঙ্গকরে। কিন্তু প্রথম থেকেই রটে যায় যে কফিনটি চন্দ্রিমা উদ্যানে সমাহিত করা হলেও তাতে মিলিটারি জিয়ার লাশই ছিল কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। সাধারন জনগন তার তথাকথিত মাজারে যেতোনা। যেত কেবল বিএনপির নেতা-কর্মীরা এবং তাদের যাওয়ার মধ্যে বা ফুল দেবার মধ্যে কোনো শ্রদ্ধা ছিল কিনা তা নিয়েও নানা কথা রয়েছে। এখনো সেই অবস্থা বিরাজ করছে। এই কবরকে ঘিরে চলছে অপরাজনীতি।
অথচ বঙ্গবন্ধুকে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সমাধিকে জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হলেও পরদিন থেকেই মানুষের ঢল নামে শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে। আগে মানুষ আড়াই ঘন্টায় পদ্মা পার হয়ে দুই পাড়ের ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে যেতেন। এখন বাস বা কার-এ যাবেন। কোনো কষ্ট হবেনা। সময় বাঁচবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা।
আরেকটা ব্যাপার পদ্মা সেতু হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে বিশাল সাফল্য বয়ে আনবে। মালামাল পরিবহন সহজ হবে খরচ কমে যাবে। সময় সাশ্রয় হবে। ঐ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে, মাথা পিছু আয় বেড়ে যাবে। জিডিপি বেড়ে ডাবল ডিজিট ছাড়িয়ে যাবে। এখানেই আওয়ামীলীগ বিরোধীদের যত গাত্রদাহ। হতাশ। হতাশা থেকে এখন উগ্র হয়ে উঠেছে।
আমি কিছু নির্লজ্জ মানুষের ঠিকুজি তুলে ধরতে চাই। এক নম্বরে যে মানুষটির কথা বলব তিনি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাষ্টি ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরী। ভদ্রলোক গত কয়েক বছর ধরে ভারতের আন্না হাজারের ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে কখন যে কী বলছেন তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। সর্বশেষ তিনি জাতীয় সরকারের একটা রূপরেখা দিয়েছেন এবং জাতীয় সরকার পরবর্তী সাধারন নির্বাচন পরিচালনা করবেন ভালো কথা। আন্না হাজারে কোনো দলের তল্পিবাহক হয়ে আন্দোলন করেননি। আমাদের ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধও করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিয়েছেন। বিজয়ের পর দেশে ফিরে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করেন। এ ব্যাপারে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে অনেক সুবিধা নিয়েছেন। হঠাৎ করে তিনি জামাত-বিএনপিতে যোগ দিয়ে অনেক আকথা কুকথা বলার পর জাতীয় সরকারের কথা বললেন, যা আওয়ামীলীগ বিরোধী অনেক দলের দাবী। এই জাতীয় সরকারে তিনি এমন সব লোকের নাম দিয়েছেন যারা বিতর্কিত, দলহীন, কর্মীহীন ও সমর্থকহীন। তাদের কথা পরে আসছি।
প্রথমে যে নামটি উল্লেখ করব তিনি জাতির পিতার ছোট কন্যা শেখ রেহানা। এই নামটি উল্লেখ করেছেন দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার কন্যা জায়মা রহমানের পরে এবং তালিকার সর্বশেষ। শেখ রেহেনার ধমনীতে বইছে ইতিহাসের মহাবিপ্লবের মহানায়ক বাঙালির জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত। আর জায়মার শরীরে বইছে হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবনের লুটেরা মিলিটারী জিয়া নন্দ দুলাল পলাতক তারেক রহমানের রক্ত। কাজেই এই ভাবে দুই জনকে এক কাতারে দাঁড় করানো রীতিমত বেয়াদবী।
দ্বিতীয়ত যে কজনের নাম দেখেছি তালিকায় তাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন, নোবেল লরেট ড. মুহম্মদ ইউনুস কিংবা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন (মূলত ব্রিফলেস ব্যারিষ্টার, দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠানে টাকা দিয়ে প্রধান অতিথি হতেন। রাতে ইত্তেফাকে এসে কোনো রিপোর্টারকে দিয়ে একখানা রিপোর্ট লেখাতেন। প্রথম পাতায় ৩ কলাম ৪ কলাম হেডিং দিয়ে ছাপাতেন) এইভাবে ইত্তেফাক কে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেন। এক তত্ত্বাবদায়ক সরকারের উপদেষ্টা হয়ে সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়ে মাঝপথে রিজাইন করে দেন। আদালতেও মামলা নেই বলে কালে- কস্মিনে দাড়ান। বিএনপি জামাতের মিটিং এ বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান সেই যে সমাজচ্যুত হলেন আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছেনা।
ড. কামাল হোসেন জনসমর্থহীন বড় নেতা। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিপর্যয়ের জন্যে সম্পূর্নরূপে নেত্রীকে ( শেখ হাসিনা) দায়ী করে আওয়ামীলীগ ছেড়ে যান এবং গনফোরাম নামে একটি দল গঠন করে দল প্রধান হন। কিন্তু গত ৩০ বছরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিও পুরো করতে পারেননি। সর্বশেষ গত নির্বাচনে জামাত বিএনপি জোটে যোগ দেন। যেহতু দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া বা একই দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এবং ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার দায়ে অভিযুক্ত তারেক রহমানও পলাতক। এই শূন্যতার সুযোগে তাঁকে জোট প্রধান করা হবে এবং নির্বাচনে জিতে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হবে। কিন্তু তাতে যে অনেক বালি। হতে পারলেন না জোটনেতা, নির্বাচনও গোহারা।
নোবেল লরেট ড. মুহম্মদ ইউনুস। এই ভদ্রলোক ছিলেন গ্রামীন ব্যাংকের এমডি। কিন্তু তার বয়স ৬৫ ছাড়িয়ে যাওয়ায় তাঁকে এমডি থেকে অবসর এবং উপদেষ্টা হবার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তা গ্রহন না করে চলে যান তার গডমাদার সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসেস হিলারী ক্লিনটনের কাছে। এই দুই আন্তর্জাতিক মহারিথের চক্রান্তে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ উথাপন করে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। এই জাগাটাতেই ভূল করে ফেলে কারন তখনও সেতুর প্রাথমিক কাজও শুরু হয়নি। অভিযোগের শহীদ হন তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। পরে এ নিয়ে কানাডার আদালতে মামলা হয়। মামলায় রায় হয় দুর্নীতি নয় দুর্নীতির চিন্তাভাবনা (?) হয়েছে। তারা নিশ্চয়ই অন্তর্জামি নইলে মানুষের মনের কথা জানার কথা নয়।
আরো কয়েকটি নামের মধ্যে নবনীতা চৌধুরী নামে একজনের নাম দেখলাম। তিনি যদি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সঞ্চালক নবনীতা চৌধুরী হন তাহলে আর কি কিছু বলার প্রয়োজন আছে? আরেকজনের নাম এডঃ সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান। মানবধিকার নিয়ে কাজ করেন কখনো কখনো বিতর্কিত ভূমিকায় অবর্তীন হন। আরেকজন দেখলাম বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) সাখাওয়াত হোসেন। আর্মি থেকে তার চাকরী চলে যাওয়া নিয়ে নানান কথা শোনা গেছে। অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কথা নাইবা বললাম।
তবে ঐ তালিকায় যেমন শেখ রেহানার নাম সন্নিবেশিত করার পেছনে দূর টার্গেট আছে তেমনি অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী এ-কে আজদের নাম সম্বিবোশিত করার পেছনেও দূবভিসন্ধি রয়েছে।
এমন একটি সময় এই তথাকথিত জাতীয় সরকারের রূপরেখা দেয়া হল যখন আগামী ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন পদ্মা সেতুর স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু তোয়াক্কা না করে বাস্তবায়নকারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডাঃ জাফর উল্লাহ চৌধুরীর রূপরেখার পাশাপাশি ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে মানুষের আনন্দ মাটি ঢাকতে চাচ্ছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শেষ হওয়ায় বিএনপি হতাশ হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যথার্থই বলেছেন বিএনপি-ছাত্রদল ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে লাশ ফেলতে চায় আনন্দ মাটি করার কক্ষ্যে। ছাত্রদলের একটি নমুনা দিতে চাই- তারা সংসদ সম্মেলন করতে গেছেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সাথে দেড় দুইশ কর্মী। মিছিল বের করেছে হাইকোর্ট থেকে তাদের শ্লোগান ছিল “৭৫ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার”। হাইকোর্টের কালো কোর্টধারীরাও মিছিল বের করে। এতে তাদের টার্গেট বোঝার জন্যে বিশ্লেষন নিষপ্রয়োজন। বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমানও সমাবেশে হুমকি দিয়েছেন বিএনপির একজনকে হত্যা করা হলে তারা ১০ জনের লাশ ফেলবেন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় তো হুমকী ছাতা কথাই বলেন না। বক্তৃতা দিতে দাড়ালে তিনি এমন পোজ নেন যা দৃষ্টি কটুও বটে। তাদের সংরক্ষিত আসনের এমপি ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা কথায় কথায় আওয়ামী লীগকে “মুনাফিক” বলেন। ক্যানো?
বস্তত পদ্মাসেতুর নির্মান কাজ শেষ হওয়ায় তাদের মাথাই নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন “আওয়ামী লীগ পদ্মাসেতু বানাতে পারবেনা। কাজ শুরু হলে বললেন- জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানানো হচ্ছে। ওতে কেউ উঠবেন না ভেঙ্গে পড়বে”।
সবরকম ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ছাপিয়ে যখন নির্মান কাজ শেষ হয়ে গেল তখন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-রুমিন ফারহানারা নতুন কথা বললেন- ১০ হাজার কোটি টাকা খরছ হবার কথা থাকলেও খরচ করা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। মীর্জা ফখরুল বললেন- বাড়তি টাকা সব বিদেশে পাচার করা হয়েছে। উদ্ভট কথাবার্তা।
লেখক- উপদেষ্টা সম্পাদক, পথে প্রান্তরে।