Search
Close this search box.

দেশবাসীকে স্যালুট জানাই, আপনাদের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব : প্রধানমন্ত্রী

দেশবাসীকে স্যালুট জানাই : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার : ‘কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অনুযোগ নেই। আমরা নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশবাসীকে নিয়ে সব সমস্যা মোকাবিলা করে যাচ্ছি। আমি দেশবাসীকে স্যালুট জানাই। প্রয়োজনে আপনাদের জন্য জীবন দেব।’-পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করতে সেতুর মাওয়া প্রান্তে পৌঁছে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর জাজিরা প্রান্তেও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের কারণে সেতু নির্মাণে বেগ পেতে হয়েছে। তবে, থেমে যায়নি। আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন, আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। বাবা-মাকে হারিয়ে আপনাদের ভালোবাসায় বেঁচে আছি। আপনাদের জন্য প্রয়োজনে জীবন দেব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ মুক্তি পাবে, সে প্রত্যাশায় বঙ্গবন্ধু মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দেশ স্বাধীন করেন। কিন্তু, মাত্র তিন বছর সময় পান তিনি। কিছু খুনি ১৯৭৫ সালে আমার পরিবারের লোকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আজ আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করেছি, যে সেতুর সঙ্গে আমাদের উন্নয়ন জড়িত। সেটা নিয়ে কেন দুর্নীতি হবে। তারা টাকা দেয়নি। কিন্তু, আমার-আপনাদের সহযোগিতায় এ সেতু করতে সক্ষম হয়েছি।’

জনগণের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যার যার জায়গায় বৃক্ষ রোপন করবেন। এক ইঞ্চি জায়গাও যেন খালি না থাকে। আপনারা জানেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের কারণে খাদ্যের অভাব তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশে যেন খাদ্যের অভাব না হয়। যার যতটুকু আছে, যে যেখানে আছেন, নিজে উৎপাদন করবেন। নিজে খাবেন, অন্যকে দেবেন, বাজারের পাঠাবেন। কোনো জায়গা যেন খালি না থাকে, সেভাবে কাজ করবেন। এ দেশ আপনাদের, এ দেশ আমাদের।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এ দেশকে আমরা গড়ে তুলব। সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আরও উন্নত জীবন যেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা পায়, তার ব্যবস্থা আমি করব। আজ আপনাদের কাছে এটা আমার ওয়াদা। বাবা-মা সব হারিয়ে আপনাদের পেয়েছি। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের জন্যই আমি আছি। আপনাদের অধিকার আদায়ে আমি যেকোনো ত্যাগ শিকার করতে সদা প্রস্তুত। এ ওয়াদা আমি আপনাদের দিয়ে গেলাম। প্রয়োজনে আপনাদের জন্য আমার জীবনটাই দেব।’

বক্তব্যের শেষে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিক্ত আমি, সিক্ত আমি, দেওয়ার কিছু নাই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুর গুণগত মান বজায় রাখতে কোনো কার্পণ্য করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখবে এ সেতু। দেশের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। এ দেশের মানুষই আমার সাহসের ঠিকানা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরার্শক, ঠিকাদার, প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ, শ্রমিক, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের অধিবাসীদের যাদের জমিজমা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের এই ত্যাগ ও সহযোগিতা জাতি চিরদিন স্মরণ রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জ্বালা ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহু কাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এ সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয় এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর জেদ।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি। পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্পন যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, পারেনি। আমরা বিজয়ী হয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারুণ্যের কবি, দ্রোহের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের ভাষায় তাই বলতে চাই: সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়, জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা মাথা নোয়াইনি।’

পদ্মা সেতু নির্মাণের গল্প তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি শুধু ইট, রড, সিমেন্ট ও কংক্রিটের সেতু নয়, বাংলাদেশের সম্মান আর সক্ষমতার প্রতীক। এই সেতুর নির্মাণ ঠেকাতে ষড়যন্ত্র হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। টাকা ছাড় না হতেই দুর্নীতির কথা বলা হলো। মামলা হলো। সব কিছু পেরিয়ে আমরা আজ এ সেতু উদ্‌বোধন করতে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে আমি জাপানে গিয়েছিলাম। ওই সময় জাপান সরকারকে বলেছিলাম। সে অনুযায়ী পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যায়। কিন্তু, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি। আমরা ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় কার্যক্রম শুরু করি। কিন্তু, বাংলাদেশের একজন স্বনামধন্য লোক একটি ব্যাংকের পদে থাকার জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে।  বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে এগিয়ে এলেও পরে ষড়যন্ত্রের কারণে তারা ফিরে যায়। কানাডার আদালতে মামলা করা হলেও সেখানে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণ করতে পারেনি। বরং, আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগেছিল, এখন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব। জনগণ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আজকের পদ্মা সেতু মানুষের সহযোগিতায় করাতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধসে পড়েনি। সমগ্র বিশ্বের কাছে আজ বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের জনগণকে আমি স্যালুট জানাই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কাজের গুণগত মানে আপস করা হয়নি। এটা আশ্চর্য্যজনক সৃষ্টি। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ সেতুর সৃষ্টি থেকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। যেহেতু খরস্রোতা নদী, তাই যান চলাচল যেন নির্বিঘ্ন করা যায়, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। যা মূল সেতুকে জাতীয় সড়ক যোগযোগ নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করেছে। পদ্মা সেতুর ৪১টির মধ্যে ৩৭ স্প্যানের নিচ দিয়ে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বের সেরা প্রযুক্তিতে নির্মিত এ দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে স্টিল ও কংক্রিটের স্ট্রাকচারে। বহুমুখী এই সেতুর ওপরের ডেক দিয়ে যানবাহন এবং নিচের ডেক দিয়ে ট্রেন চলেবে। সেতু চালু হওয়ার পর সড়ক ও রেলপথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগযোগ স্থাপিত হবে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ