ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে
বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে
স্টাফ রিপোর্টার : টাঙ্গাইলে সৃষ্টি কোচিং সেন্টারের ৫ম শ্রেনির ছাত্র শিহাবের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় একটি সূত্র বলছে শিহাবকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তবে মৃত্যুর পর বার বারই কোচিং কর্তৃপক্ষ বলছে আত্মহত্যা। তবে শিহাবের পরিবার বলছে হত্যা। এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে। তাতে করে র্যাব অভিযান চালিয়ে দুই শিক্ষককে আটক করেছে বলে জানা গেছে। আবু বকর ও নাসির নামে দুই শিক্ষক আটক হয়েছে।
পরিবার লাশ গ্রহণের পর শিহাবের শরীরে নির্মম পাশবিক অত্যাচারের চিহ্ন দেখতে পায়। যা পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে শিহাব হত্যার বিচারের দাবি উঠে। তারই ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানববন্ধন করে। সেই মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের ছবি তুলে চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছে।
বহিস্কৃত এক ছাত্র মানববন্ধনে উপস্থিত হয়ে এই অভিযোগ করেন। এসময় আরো অনেককে বহিস্কারের জন্য অভিভাবকদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীরা খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমবেত হন।
এসময় তারা পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিহাব কে পাষবিক নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ এনে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের কঠোর শাস্তির দাবি সম্বলিত শ্লোগান দেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- মৃত শিহাবের বাবা ইলিয়াস হোসেন, মা আসমা বেগম, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসাইন, সৃষ্টি স্কুলের শিক্ষার্থী আশা আক্তার, শিক্ষার্থী অর্পিতা, সুমাইয়া আক্তার, ওয়ালিব ভূইয়া, মেহেদী হাসান, ফারহান নিঝুম, রাকিবুল হাসান, রাকাত হোসেন, তাহসিন হাসান, মো. হিমু সহ আরো অনেকে।
মানববন্ধনে টাঙ্গাইলের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, কুমুদিনী সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী, টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করে। বক্তারা বলেন, ‘পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিহাব মিয়াকে পাষবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।এত ছোট শিশু আত্মহত্যা করতে পারে না। সে হয় তো স্কুলের কোনও বিষয় দেখেছিল, যা তার দেখা উচিত ছিল না। এজন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’ এসময় বক্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কারগার ও শিক্ষাকে বাণিজ্যিক পণ্যে রূপান্তর না করার অনুরোধ জানান।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা নিহত শিহাবের খুনীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানান। তারা বলেন কিছুদিন পর পরই সৃষ্টি কোচিং সেন্টারে এমন ঘটনা ঘটে। তারা প্রতিবারই টাকার জোরে সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলে। এবার তাদের সেই সুযোগ দেয়া যাবে না। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ফার্সি ভাষা বিভাগ, প্রভোস্ট এফ রহমান হলের অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম, বুয়েট শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউল রহমান, ফারসি ভাষা বিভাগের শিক্ষার্থী রোকন উদ্দিন রানা ও সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সৃষ্টি ভবনের একটি ছবিতে দেখা যায় যে টয়লেটে শিহাবের লাশ পাওয়া গেছে সেখানে মূলত কোন ঝর্না নেই। কোচিং কতৃপক্ষের দাবী শাওয়ারের চাবিতে ঝুলে শিহাব আত্মহত্যা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ছবিতে দেখানো স্থানে কোন ভাবেই আত্মহত্যা সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য যে, গত ২০ জুন সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল শহরের বিশ্বাস বেতকা সুপারি বাগান এলাকায় সৃষ্টি স্কুলের আবাসিক ভবন থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শিহাবের লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান ভবনে দায়িত্বরত শিক্ষকরা। মৃত শিহাব (১২) জেলার সখিপুর উপজেলার বেরবাড়ি গ্রামের প্রবাসী ইলিয়াস হোসেনের ছেলে। ঐ দিনি শিশুটিকে হত্যার অভিযোগ আনে তার পরিবার। পরে লাশ পারিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। এঘটনায় টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন জানান, শিহাবের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।