Search
Close this search box.

হিরো সাজতে শিক্ষককে পেটায় জিতু- র‌্যাব

হিরো সাজতে শিক্ষককে পেটায় জিতু

স্টাফ রিপোর্টার \ হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল সরকারকে হত্যার দায়ে ওই স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র  জিতু কে গাজীপুর থেকে গ্রেফতারের পর সকালে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি স্কুলের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন উৎপল সরকার। শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম, ইভটিজিংসহ শৃঙ্খলাভঙ্গজনিত বিষয়গুলোও দেখাশোনা করতেন তিনি। দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতুকেও তিনি শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কয়েকবার সতর্ক করেছিলেন।

মিডিয়া ব্রিফিং
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

কমান্ডার মঈন বলেন, আশরাফুল আহসান জিতু স্কুলের ছাত্র হলেও সে ওই প্রতিষ্ঠানের কলেজ পর্যায়ের একজন ছাত্রীর সঙ্গে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করত । বিষয়টি শিক্ষক উৎপল সরকারের চোখে পড়লে,তিনি জিতুকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ওই ছাত্রীর কাছে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে উৎপল সরকারকে বেধরক মারধর করে জিতু। পরদিন শিক্ষক উৎপল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন।

ঘটনার পর জিতু পালিয়ে আত্বগোপনে চলে যায়। সে দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। বুধবার র‌্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‌্যাব-১ ও র‌্যাব-৪-এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতু ওরফে জিতু দাদাকে গ্রেফতার করা হয়।

জিতুকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জিতু গত ২৫ জুন একটি ক্রিকেট স্ট্যাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণিকক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। পরে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে।, তাকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর জখম করে, যার ফলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল সরকার মারা যান। ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জিতু এলাকায় থাকলেও পরে গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। সে প্রথমে বাসে করে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। সেখানে এক রাত থেকে পরদিন আরিচা ফেরিঘাটে যায়। সেখান থেকে ট্রলারে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার পরিচিত একজনের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন ভোরে সে আবারো তার অবস্থান পরিবর্তন করতে আতাইকুলা থেকে বাসে কাজীরহাট লঞ্চ টার্মিনালে আসে। লঞ্চে করে আরিচাঘাট পৌঁছে। সেখান থেকে বাসে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখান থেকে জিতুকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

খন্দকার মঈন জানান, জিতু প্রথমে স্কুলে পড়াশোনা করতো। পরে সে মাদরাসায় ভর্তি হয়। এরপর আবার সে স্কুলে ভর্তি হয়। সে এই স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় । জেএসসির সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর। কিন্তু মামলার এজাহারে তার বয়স ১৬ উল্লেখ করা হয়েছে। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং করতো জিতু। স্কুলে সবার সামনে ধূমপান, ইউনিফর্ম ছাড়া স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করতো।

তিনি আরও বলেন, জিতু তার নেতৃত্বে এলাকায় জিতু দাদা নামে একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে। গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতো। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার অনুসারী গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ