স্টাফ রিপোর্টার \ রাজধানীর প্রাণ কেন্দ্র কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি কাঁচাবাজার দ্রুত সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু হয়ে আসা গাড়ি রাজধানী ঢাকার মধ্যে না ঢুকে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যেতে পারে সেজন্য ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
রোববার ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ) অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি বিষয়ে নির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এপিএ সাইনিং হলো। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন যে আমরা যদি সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারি তাহলে কোনো কিছুই সম্ভব নয়। গত ৩০ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বক্তৃতা দিয়েছেন। সেখানে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পদ্মা সেতু সফল হওয়ার একটা বড় কারণ হলো প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন সফল। তিনি বলেছেন, প্রযুক্তিগুলো খুব কঠিন। কিন্তু এখানকার প্রসাশনিক ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন নিশ্চিত হয়েছিলাম বলেই পদ্মার মতো একটা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। সুশাসনের যতগুলো মানদণ্ড আছে সেগুলোতে জোর দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি দুটি বিষয়ে নির্দিষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, যেহেতু পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিমের সঙ্গে আমাদের একটা যোগাযোগ হয়ে যাচ্ছে, প্রচুর পরিমাণের পণ্য এখন ঢাকা শহরে আসা শুরু করবে বা চট্টগ্রামের দিকে যাবে। সেই ক্ষেত্রে ঢাকা শহরে যে কাঁচামালগুলো আসবে, আমাদের যেহেতু একটাই মার্কেট- কারওয়ান বাজার। এটাকে উনি আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেটা খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। যেন ঢাকা শহরে সব কাঁচামাল না ঢোকে। প্রয়োজন হলে কেরানীগঞ্জের ওদিকে, সায়েদাবাদের ওইখানে, আমিনবাজারের ওইখানে আর এদিকে মহাখালী থেকে আর একটু উপরের দিকে কোথাও যদি কাঁচাবাজারগুলো করি এবং সেখান থেকে যদি ডিস্ট্রিবিউট করি তাহলে আমাদের শহরের সেন্টার টায় ট্রাফিক জ্যাম এবং নোংরা হওয়া থেকে রেহাই পাবে। উনি নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা নোট করেছি। আমরা তাড়াতাড়ি এটা বাস্তবায়ন করবো।
তিনি বলেন, এটা আগেরই সিদ্ধান্ত ছিল। উনি আরও ৪ থেকে ৫টা জায়গার কথা উল্লেখ করেছেন। মহাখালীতে একটা বড় জায়গা ছিল। করোনার কারণে আমরা সেখানে একটা ১৫শ বেডের হাসপাতাল করেছি। শুধু এখানে না, উনি কাঁচপুরেও করতে বলেছেন। প্রয়োজন হলে কেরানীগঞ্জে এবং আমিনবাজারেও। এগুলো এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ এগুলো নিয়ে কাজ করতেছে। উনি বলেছেন- যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এটা করতে।
প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনা তুলে ধরে খন্দকার আনোয়ার বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে যে ট্রান্সপোর্ট হবে সেটা স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানে অনুমোদন করা হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে, যেন ঢাকা শহরে কোনো গাড়ি না ঢোকে।
তিনি আরও বলেন, ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষে ডিপিপি হচ্ছে। হেমায়েতপুরের ওখান থেকে এলিভেটেড রাস্তা যাবে। এটা কেরানীগঞ্জে এসে উপর দিয়ে ক্রস করবে সেকেন্ড লেভেলে। ঢাকা-মাওয়া সড়ক ফাস্ট লেবেলে আছে, এটা সেকেন্ড লেবেলে ক্রস করবে। ওখানে ইন ও আউট থাকবে। আর একটু ডাউনে গিয়ে পোস্তগোলার ওদিকে ক্যাবল স্টেট ব্রিজ হবে যেন পিয়ার না পড়ে। এরপর পাগলা ও ফতুল্লাকে ডাইনে রেখে স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যাকে ক্রস করবে ক্যাবল স্ট্রেট ব্রিজ হবে কোনো পিয়ার হবে না সেটা লাঙ্গলবন্দ দিয়ে উঠবে। আর ওখান থেকে মদনপুর দিয়ে একটা লিংক থাকবে, যারা সিলেটে বা ময়মনসিংহের দিকে যাবে তারা ওদিক দিয়ে বের হয়ে যাবে।
‘আর চট্টগ্রাম-কক্সাবাজারের যারা যাবে তারা লাঙ্গলবন্দ দিয়ে বের হয়ে চলে যাবে। তখন নারায়ণগঞ্জের গাড়ির বড় অংশ মেইন রোডে ঢুকবে না। এখান দিয়ে এসে পোস্তগোলা বা ঢাকার দিক যেখানে সুবিধা হবে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের কাছে একটা লিংক থাকবে। এছাড়া গাবতলীর থেকে একটা লিংক দেওয়া হবে যাবে গাবতলীর বাস শহরে ঢোকার প্রয়োজন হবে না।’
তিনি আরও বলেন, এটার ডিপিপি হচ্ছে। খুব দ্রুত ডিপিপি শেষ হবে। উনি নির্দেশনা দিয়েছেন দ্রুত হয়ে যাবে।
মন্ত্রিসভায় পদ্মা সেতু সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভিনন্দন প্রস্তাব আনার পরে উনিও (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন যে এটা সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং বিশেষ করে জনগণ যেভাবে সরকারকে বা প্রধানমন্ত্রীকে সাপোর্ট দিয়েছে বা ইনস্পায়ার করেছে করেছে, এটা একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।