Search
Close this search box.

মাকে খুন হতে দেখার বর্ণনা দিলো বাবুলের ছেলে

বাবুল আক্তার

স্টাফ রিপোর্টার \ সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের দুই সন্তানকে তাদের মা মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। এ সময় বাবুল আক্তারের ছেলে চোখের সামনে তার মাকে খুন হতে দেখার সেই মর্মস্পর্শী ঘটনার বর্ণনা দেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

সোমবার সকাল ১০টায় মাগুরা জেলা সদরে বাবুল আক্তারের বাবার বাসায় গিয়ে তার ১৩ বছর বয়সী ছেলে ও ৭ বছর বয়সী মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ সময় আদালতের নির্দেশে সমাজসেবা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা ও একজন নারী পুলিশ সদস্য এবং তাদের দাদা ছিলেন। দুপুর ১টায় জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে ওই বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন তদন্ত কর্মকর্তা।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু তথ্য পাওয়া গেছে। হত্যাকাণ্ডের সময় ছেলেটা মায়ের সঙ্গে ছিল। তখন অবশ্য তার বয়স কম ছিল। মেমোরিতে যা যা আছে সেভাবে সে বর্ণনা দিয়েছে। আর মেয়েটার তো তখন বয়স ছিল মাত্র এক বছর। তার কিছুই মনে নেই। সে এমনিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় উপস্থিত ছিল।’

আর জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত যেসব তথ্য পেয়েছি, সেগুলো আগে পর্যালোচনা করব। আবারও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি চাইব। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেন সেভাবে হবে।

কারাবন্দি বাবুল আক্তারের ছেলে ও মেয়ে গত এক বছর ধরে মাগুরায় দাদার বাড়িতে অবস্থান করছে। বাবুলের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক।

বাবুলের ছেলের বয়স যখন সাত বছর, তার সামনেই মা মাহমুদা খানম মিতুকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পিবিআই গত একবছর ধরে। কিন্তু নানা আইনি জটিলতায় আদালতের একাধিকবার নির্দেশের পরও বাবুলের দুই সন্তানকে পায়নি তদন্ত সংস্থা।

২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন প্রথম এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাত ঘুরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্তভার পড়ে পিবিআইয়ের ওপর। এরপর আস্তে আস্তে জট খুলতে থাকে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টিকারী চাঞ্চল্যকর এই মামলার।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের লক্ষ্যে ১২ মে ওই মামলার ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই।

একইদিন দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া।

মামলা করতে এসে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছিলেন, চার বছর ধরে তাদের সঙ্গে মিতুর ছেলেমেয়েদের কোনো যোগাযোগ নেই। তারা নাতি-নাতনির মুখও দেখতে পারছেন না। বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে মিতুর ছেলেমেয়েদের তাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন।

তবে মোশাররফ হোসেনের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে সেটি নিষ্পত্তি করেছে পিবিআই। আদালতের নির্দেশে এখন শুধুমাত্র বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। ওই মামলায় বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ