স্টাফ রিপোর্টার \ পথের দুর্ভোগ ও গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য ঘুরমুখী মানুষের ইদ আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, শহরের কষ্টক্লান্ত মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ উজ্জাপনে ফিরছেন গ্রামে। কিন্তু সিন্ডিকেটের ভাড়া নৈরাজ্য ও পথের সীমাহীন মহাদুর্ভোগ তাদের ঈদ আনন্দকে ম্লান করে দিচ্ছে। ঈদ এলেই আওয়ামী সরকারের পরিবহন ও টিকিট সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। যে যেভাবে পারে, ভাড়া বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটে। সবকিছু করে সরকারি দলের লোকেরা। কারণ, এই অর্থের ভাগ পায় ক্ষমতাসীনদলের রাঘব বোয়ালরা।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের মায়াজাল সৃষ্টির মাধ্যমে মূলত দুর্নীতির উল্লম্ফন দেশে বিকট রূপ ধারণ করেছে। সরকারপ্রধান ঘরে ঘরে আলো পোঁছে দেওয়ার কথা বলে ঘরে ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার পৌঁছে দিয়েছেন। বারবার পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতার মিথ্যা বয়ান দিয়ে বিদ্যুতের বাম্পার উৎপাদনকারী সরকারের আমলে এই ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কথা শুনতে হচ্ছে কেন? এটি সেই কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য বেলী ফুলের মালা দিয়ে বিবাহের আহ্বান জানানোর মতো হবে না তো, যেখানে কারও কারও বিয়ে সোনার মুকুট পরে হয়েছে?’
রিজভী বলেন, ‘বছরব্যাপী কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজন হয়েছে। সেসব অনুষ্ঠানে হয়েছে ঝাড়বাতির আলোক ঝলকানি। জমকালো আলোকসজ্জা করে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এখন মন্ত্রীরা বলছেন বিয়ের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে শেষ করতে হবে, করা যাবে না আলোকসজ্জা। কোনো ধর্মীয় উৎসবেও আলোকসজ্জা করা যাবে না। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সরকার এখন অফিস টাইম কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দেশ যে শ্রীলংকার মতো এক মহা দেউলিয়াত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকল না বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, একের পর এক জনগণের অতি প্রয়োজনীয় সেবা জ্বালানি তেল, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। গতকালই পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। মূল্যের সর্বগ্রাসী আগুনের উত্তাপে চারিদিক বিপণ্ন হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। এর আগে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম। সরকারের প্রতিটি খাতে দুর্নীতির সমান্তরাল বিচ্ছুরণ ছাড়া আর কিছু নেই। দেশের ওপর মূলত আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর সামষ্টিক দখলদারি চলছে।
রিজভী বলেন, এই লুটপাটের সরকার আকাশে স্যাটেলাইট পাঠায়, নিচে রাস্তা বন্ধ করে ওপরে মেট্রোরেল-ফ্লাইওভার বানায়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জন্য কোটি টাকার আতশবাজি পুড়ায়। গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে মূল্যবান এলপিজি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এসব কিছুই লুটপাটের জন্য। অথচ মানুষের এখন খাদ্য নেই, কর্ম নেই, ঘরে ঘরে শিক্ষিত বেকার, অনাহারক্লিষ্ট মানুষ খাদ্যের সন্তান হত্যা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, মুনির হোসেন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ অন্যরা।