স্টাফ রিপোর্টার \ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)এ ভোট দেওয়ার সময় কেউ ভুল করে পছন্দের প্রার্থীর পরিবর্তে অন্য প্রতীকে ভোট দিলে তা আর সংশোধন করার সুযোগ থাকছে না। একই সঙ্গে পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ার পর তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও তুলে দেওয়ার কথা ভবছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।বর্তমানে ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ মিললে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ব্যালট ইউনিট ওপেন করেন। এরপর ভোটকক্ষের গোপন বুথে গিয়ে ভোটারকে ভোট দেওয়া সম্পন্ন করার জন্য দুটি বোতাম অবশ্যই চাপতে হয়।
এক্ষেত্রে ব্যালট ইউনিটে প্রার্থীদের প্রতীকের পাশে থাকে সাদা বোতাম, সেখান থেকে ভোটার তার পছন্দের প্রতীকের পাশের সাদা বোতামে প্রথমে চাপ দেন, এরপর তা নিশ্চিত করার জন্য নিচের সবুজ বোতামে (কনফার্ম বাটন) চাপ দিয়েই ভোট দেওয়া সম্পন্ন করেন।
সবুজ বোতাম চাপার আগে ভোটার যদি মনে করেন ভুলে অন্য প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়েছেন, তবে নিচের লাল বোতামে (ক্যান্সেল বাটন) চাপ দিয়ে তা বাতিল করতে পারেন। এরপর নতুন করে আবার নিজের পছন্দের প্রতীকের পাশে সাদা বোতামে চাপ দিয়ে নিচের সবুজ বোতাম চেপে ভোট সম্পন্ন করতে পারেন। কিংবা ভুলে অন্য বোতাম চাপ লেগে গেলে বা দিলে, দ্বিতীয়বার পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকের পাশে সাদা বোতাম চাপা যায়। এতে প্রথমবার চাপ দেওয়া প্রতীকের পাশে সাদা বোতামটি নিভে যায়, আর পছন্দের প্রতীকের পাশের সাদা বোতামটি জ্বলন্ত অবস্থায় থাকে। এরপর সবুজ বোতাম চেপে ভোট দেওয়া শেষ করতে হয়।
ইসি মনে করছে বিষয়টি অপেক্ষাকৃত জটিল ও সময় সাপেক্ষ। তাই দ্বিতীয়বার প্রতীক বাছাইয়ের সুযোগ আর রাখতে চাচ্ছে না সংস্থাটি। কেননা, কাগজের ব্যালটে দ্বিতীয়বার প্রতীক বাছাই বা সংশোধনের কোনো সুযোগ নেই। সেখানে একবার একটি প্রতীকে সিল মারলে ভোট দেওয়া হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার সিল মারার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সিল সঠিক স্থানে না পড়লে ভোটটি বাতিল বলেও গণ্য হয়।
অন্যদিকে ইভিএমের ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকের লাল বোতামটি দুইবার চাপলে ব্যালটটি বাতিল হয়ে যায়। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ভোটার আর কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন না। এটা অনেকটা ‘না’ ভোটের মতো হয় বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা।
বর্তমানে এই লাল বোতামটি বা ক্যান্সেল বাটনটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। স্থানীয় নির্বাচনে ভোটারের জন্য মেয়র/চেয়ারম্যান, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর; এই তিন পদের ব্যালট থাকে। এক্ষেত্রে ভোটার কেবল তার পছন্দের প্রার্থীর পদটিতে ভোট দিয়ে অন্য দুই পদের ক্ষেত্রে ক্যান্সেল বাটন বা লাল বোতাম চাপেন। এতে সময়ক্ষেপণ হয়, তাই এই সুযোগটিও আর রাখতে চাচ্ছে না ইসি।
এ বিষয়ে ইসি সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান জানান, সম্প্রতি তারা নিজেরাই এই পদ্ধতিতে ইভিএমে ভোট দিয়ে যাচাই করেছেন। বিষয়টি তাদের কাছে সহজ মনে হয়েছে এবং সময় কম লেগেছে।
তিনি বলেন, আমরা ক্যান্সেল বাটন (লাল বোতাম) ও কনফার্ম বাটন (সবুজ বোতাম) তুলে দিতে চাচ্ছি। এক্ষেত্রে ভোটার কেবল একটি বোতামে চাপ দেবে। আর তাতেই তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে।
ইভিএমের কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এমন কিছু নয়। বোতাম দুটি নিষ্ক্রিয় করে দিলেই হবে, এজন্য কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে না। তবে ভবিষ্যতে যে মেশিনগুলো তৈরি করা হবে, সেগুলোতে চাইলে এই বোতাম না রাখলেও চলবে।
সম্প্রতি ইসি আয়োজিত ইভিএম যাচাইকরণ মতবিনিময় সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম ব্যবহারের দাবি জানিয়েছে। ৩৯টি নিবন্ধিতি দলের মধ্যে ওই আলোচনায় অংশ নেয়নি ১১টি দল। বাকি ২৮টি দলের মধ্যে অনেকেই আংশিক, অনেকেই অর্ধেক আসনে, আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কোথাও ইভিএম ব্যবহার না করার কথা বলেছে।
তবে, ইসির চিন্তা ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। এনিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বারবার বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর সবার মতামতের ভিত্তিতে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।
ইসিকে অধিকতর উন্নত ও দামী ইভিএম তৈরি করে দিচ্ছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ)। বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট নিতে চাইলে আরও প্রায় ৩ লাখ এই ভোটযন্ত্র লাগবে। প্রতিটি ইভিএম সংগ্রহে ইসির ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা।