স্টাফ রিপোর্টার : অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখেছে বাংলাদেশ। ভারতের ইকোনমিকস টাইমসের সম্পাদক দিপঞ্জন রায় চৌধুরী এ নিয়ে প্রতিবেদনটি করেছেন। ইকোনমিক টাইমস বলছে, বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও অর্থনীতির ভারসাম্য ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
ভারতের ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদন
উৎপাদন খাতে বড় ধরনের ভিত্তি রচনার পাশাপাশি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে উদ্যোগ বাড়ানোয় এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি নজরে পড়ার মতো হয়ে উঠতে পারে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে এমন সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কৃষি থেকে শুরু করে ওষুধ এবং জাহাজ নির্মাণ থেকে তৈরি পোশাকসহ শিল্প খাতের বৈচিত্র্যময় ভিত্তির কারণে রপ্তানি বাড়ছে। এছাড়া আমদানি খরচ বাড়ার পরও বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ওপরে জানিয়ে বলা হয়, এমনকি মহামারীর আগেও ২০১৮-১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। একইসময়ে পাকিস্তানে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নিজের জন্য উন্নয়নের একটি রোডম্যাপ দিয়েছে যা ভিশন-২০৪১ নামে পরিচিত। এই রোডম্যাপের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়াই বাংলাদেশের লক্ষ্য। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অর্জন করছে বাংলাদেশ।
ইকোনমিক টাইমস বলছে, ১৯৭১ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার যে দেশটিকে ‘বাস্কেট কেস’ বলেছিল তার থেকে অনেক দূরে চলে এসেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি উদ্বোধন করা পদ্মা সেতুর উল্লেখ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক যে সব সংস্থা তহবিল দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তারাই এখন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর স্বাগত জানাচ্ছে।
গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত পদ্মা সেতু (সড়ক-রেল) উদ্বোধন করেন। এই সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইকোনমিক টাইমস বলছে, বাংলাদেশের জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও অর্থনীতির ভারসাম্য ধরে রাখতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।
এসবের মধ্যে রয়েছে- সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমানো, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সে নগদ প্রণোদনা এবং বিলাসবহুল পণ্যের ওপর কর আরোপ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব উদ্যোগের ফলে যে রিজার্ভ তৈরি হয়েছে তা দিয়ে সহজেই আমদানির চাহিদা মেটাতে পারবে বাংলাদেশ। এছাড়া রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানোর যে নীতি সরকার নিয়েছে তাতে অর্থনীতির গতি পুনরুদ্ধার হচ্ছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর পর অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অস্বীকার করা না গেলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বদ্ধপরিকর বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তৈরি পোশাক শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি জানিয়ে বলা হয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।