স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এ দেশের মানুষ জ্বলছে। জ্বালানি খাতকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। দুর্নীতি করে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে তারা।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘দুর্নীতি, জ্বালানি সংকটের উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতি মুহূর্তে মিথ্যাচার করছে। জনগণকে বোকা বানিয়ে দেশ চালাচ্ছে তারা। দেশের মানুষকে জালিমদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে। অবৈধ এই সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নেই। অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে তাদের। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ছোটবেলায় আমাদের মায়েরা গান শোনাতো ‘খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে।’ আজকে এই সরকার বর্গীদের ভূমিকা পালন করছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের ঘুম পারাতে হবে ‘আওয়ামী লীগ এলো দেশে’ এই কথা বলে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার দেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। কোথাও কথা বলতে পারবেন না, লিখতে পারবেন না, কোথাও যেতে পারবেন না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল (রবিবার) ওই জায়গায় (২১ আগস্টের ঘটনাস্থলে) তিনি (প্রধানমন্ত্রী) গেছেন। ওখানে তিনি অনুষ্ঠান করেছেন, স্মরণ করেছেন, ওখানে চারদিকে ঘিরে দিয়ে। একেবারে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, এত টেন্সড (উদ্বিগ্ন) থাকতে হচ্ছে কেন? বার বার একথা বলছেন কেন, আবার সেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে, চক্রান্ত হচ্ছে? তাহলে কি দেশ আপনারা ১৫/১৬ বছরে ধরে চালালেন এবং বললেন যে, টেররিজমকে আপনারা উধাও করে দিয়েছেন। সেখানে আবার সেই চিন্তা আসছে কেন? এরা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যার মধ্য দিয়ে, প্রতারণার মধ্য দিয়ে, জনগণকে বোকা বানিয়ে এই দেশটাকে চালাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা নিশ্চয় দেখছেন, এখন মানুষ কিন্তু নিজেরাই জেগে উঠতে শুরু করেছে। শেখ সুমন নামে একজনকে থানায় নিয়ে বলা হয়েছে যে, সে আত্মাহত্যা করেছে। কিন্তু আসলে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে। জনগণ আজকে নিজেরাই রাস্তা দখল করেছে, থানা ঘেরাও করেছে। আজকে রাস্তায় বের হয়ে এসেছে আমাদের চা শ্রমিকরা ন্যূনতম দাবি নিয়ে, ৩০০ টাকা। সেখানে কিন্তু ১০ হাজার/১২ হাজার টাকা বেতনও তাদের আসে না। একদিকে ২৮০০ টাকার পার ক্যাপিটা ইনকাম, আরেক দিকে ১২০ টাকা বেতন। এই যদি দেশ হয়, এই যদি একটা সমাজ হয়, এই যদি একটা অর্থনৈতিক হিসাব হয় তাহলে সেই স্বাধীনতার কোনো মূল্য আছে বলে আমার মনে হয় না। আবারো সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।
বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘দুর্নীতি জ্বালানি সংকটের উৎস’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। প্রবন্ধে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষমতাসীনদের লুণ্ঠনের চিত্র তুলে ধরা হয়।
একধাপে জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানোর পরিবর্তে সরকারের অন্য বিকল্প পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল- সরকারকে এমন পরামর্শ দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, গভীর রাতে জ্বালানির দাম ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অর্থনীতিকে সঙ্কটে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, সরকার জনকল্যাণের চেয়ে দলীয় ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় সব খরচ চাপিয়ে দিয়ে জনগণকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এই দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা সরকারের অধীনে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সম্ভব নয়। কারণ তাদের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি বলেন, বিশ্বের যেকোনো দেশের সরকার ধনীদের থেকে গরিবদের প্রতি বেশি মনোযোগী থাকে। গরিবরা যেন সমাজে একটা সুন্দর পরিবেশে বসবাস করতে পারে তারা সেটা নিশ্চিত করে। এবং এই দায়িত্বটা পালন করাই হলো সরকারের কাজ। বাংলাদেশে এটার উল্টোটা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব বাজারের মূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বাজারে জ্বালানি তেলের যে রিটেইল প্রাইস, সেখানে সমস্ত ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে দাম সমন্বয় করলে তেলের দাম শতকরা আট শতাংশ কমতে পারে। ৫১ শতাংশ বাড়তে পারে না। তাহলে যেটা দাঁড়াচ্ছে সেটা হলো, সরকার অন্যায়ভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে সত্যিকারার্থে ৫৯ শতাংশ; ৫১ শতাংশ নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নীতিমালা তৈরি করেছে। যেখানে জ্বালানি ও বিদ্যুতকে রাজনৈতিক পণ্য বানিয়েছে। তারা জ্বলানি তেলের মূল্য বাজারভিত্তিক নির্ধারণ না করে পলিটিক্যালি নির্ধারণ করেছে। এটা এখন পলিটিক্যাল কম্যুডিটি হয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সেমিনারে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে বিএনপির সেলিমা রহমান, ইসমাইল জবিউল্লাহ, মশিউর রহমান, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, সেলিম ভুঁইয়া, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সারফত আলী সপু, শাহ নেসারুল হক, তাইফুল ইসলাম টিপু, আকরামুল হাসান, শায়রুল কবির খান, রুমিন ফারহানাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।