স্টাফ রিপোর্টার \ যারা রোগীদের সেবা দিবে না, যারা অনিয়ম করবে, যারা নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক।
মঙ্গলবার বিয়াম মাল্টিপারপাস হলে, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কলাণ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল কার্যক্রমের আওতায় ৬৩ জন কর্মকর্তাকে গবেষণা-অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ হুশিয়ারি দেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশে অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকের অনিয়ম ঠেকাতে স্বাস্থ্যখাতের অভিযান চলমান থাকবে এবং প্রয়োজনে আরো জোড়ালো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে ক্যান্সারে দিনে প্রায় আড়াইশ, হৃদরোগে আড়াইশ এমনকি সাপের কামড়েও দিনে প্রায় ১৫ জনের মতো মানুষ মারা যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ যেখানে বিশ্ব ৫ম স্থান অর্জন করেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় ১ম স্থান অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, এত অগ্রগতিতে শব্দ দুষণ, পরিবেশ দুষণে বাংলাদেশ এখনো বিশ্বের তলানীর সাড়ির দেশের কাতারেই আছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশ থাকতে পারে না। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে মজবুত একটি দেশ। অথচ দেশের এই সুন্দর সময়ে এসে মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটানো যাবে না সেটি হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে গবেষণাখাতে জোর দিতে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই গবেষণার কাজকে খুবই তাৎপর্য্যরে সাথে দেখতে হবে। দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে যে যে খাতে গবেষণা জরুরি সেগুলোকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। বর্তমানে মানুষের শ্বাস-কষ্ট বেশি হচ্ছে, ক্যান্সার, হৃদরোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এগুলোর পাশাপাশি দেশে শব্দ-দুষণ, পরিবেশ দুষণ খুব বেশি বেড়ে গেছে। এগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে গবেষণা কাজ করতে হবে।
গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি এসময় বলেন, ওরস্যালাইন আবিস্কারের আগে কেউ জানত না এত সহজে এত বড় চিকিৎসা উপাদান আবিস্কার করা যেতে পারে। অথচ এখন সহজেই জানা যাচ্ছে, লবন, পানি, চিনি মিশ্রিত করে সহজ উপাদান দিয়ে ওরস্যালাইন বানানো যায়। এগুলো গবেষণার সুফল। তাই গবেষণার কাজে প্রয়োজনে আরো বরাদ্দ বাড়ানো হবে, তবুও জাতীয় ইস্যুগুলো চিহ্নিত করে সঠিকভাবে গবেষণা কাজগুলো চালিয়ে নিতে হবে। এটি ঠিকভাবে করা গেলে এমডিজি অর্জনের মত এসডিজি অর্জনেও আমরা সফল হতে পারব।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন বাবদ ১০০ কোটি টাকা তহবিল বরাদ্দের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে সমন্বিত স্বাস্থ্য বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল কার্যক্রম সম্পর্কিত নীতিমালা-২০২১’ প্রণয়ন করে অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। গবেষণা রিভিউয়ের লক্ষ্যে দুই শতাধিক বিশেষজ্ঞকে নিয়ে একটি রিভিউয়ার প্যানেল গঠন করা হয়।
এ প্রেক্ষিতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে গবেষণাকার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে গবেষকদেরকে গবেষণা প্রস্তাব দাখিলের জন্য ১০ মে ২০২১ তারিখে দুটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় (দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং দ্যা ডেইলি স্টার) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির আলোকে মোট ৬৫৭টি গবেষণা প্রস্তাব পাওয়া যায়। প্রাপ্ত গবেষণা প্রস্তাবগুলো টেকনিক্যাল কমিটি কর্তৃক প্রাথমিক বাছাইয়ের পর ২১৪টি গবেষণা প্রস্তাব রিভিউয়ের জন্য নির্বাচিত হয়।
প্রাথমিক বাছাইয়ে নির্বাচিত ২১৪টি প্রটৌকল সংশ্লিষ্ট রিভিউয়ার কর্তৃক রিভিউ সম্পন্ন করা হয়। রিভিউকৃত ২১৪টি প্রটৌকল অ্যাওয়ার্ড কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইয়ের পর ৬৩টি প্রস্তাবের অনুকূলে গবেষণা অ্যাওয়ার্ড প্রদানের (অর্থ বরাদ্দ) সুপারিশ করা হয়। অ্যাওয়ার্ড কমিটির সুপারিশেরভিত্তিতে ৬৩টি গবেষণা প্রস্তাবের মোট ৬৬,৮৬,৯৫,০০৮ (ছেশট্টি কোটি ছিয়াশি লক্ষ পঁচানব্বই হাজার আট) টাকার মধ্যে অর্থ বিভাগ ২৫% (পঁচিশ শতাংশ) হারে ১৬,৭১,৭৩,৭৫২/- (ষোল কোটি একাত্তর লক্ষ তিয়াত্তর হাজার সাতশত বায়ান্ন) টাকা অর্থ ছাড় করে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব সাইফুল হাসান বাদলের সভাপতিত্বে সভায় সুচনা বক্তব্য রাখেন সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা অ্যাওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স অ্যান্ড হসপিটালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারাফুদ্দিন আহমেদ, স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এনায়েত হোসেনসহ অন্যান্যরা।