স্টাফ রিপোর্টার – অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার নির্বাচন ভবনের অডিটরিয়ামে রোডম্যাপের মোড়ক উন্মোচন করেন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও ইসির অতিরিক্ত সচিব। নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অসুস্থতার কারণে অংশ নিতে পারেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাই প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান।
২০২৩ সালের নভেম্বরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর সেই তফসিল অনুযায়ী ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি আলমগীর বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক অংশগ্রহণ না করলে তার দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। কমিশনের মোট ৩০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এর মধ্যে যদি ২০ দল নির্বাচনে অংশ নেয় এবং ১০টি দল অংশ না নেয়, তাহলে ওই ১০টি দলের দায় আমরা নেব না। তবে অংশ নেওয়া ২০টি দলের দায় আমরা নেব।
অসুস্থা থাকায় রোডম্যাপ ঘোষণা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাই ইসি মো. আলমগীর এই রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এ সময় অপর তিন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা এবং ইসি সচিব মো. আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
গত সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। ইসির রোডম্যাপ অনুযায়ী, এবার নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুননির্ধারণ করা হবে। এজন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে আগামী বছরের জানুয়ারিতে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে। পাশাপাশি আগামী বছরের মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনে সীমানা পুননির্ধারণ করে তার খসড়া প্রকাশ করবে ইসি।
নির্বাচনি আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা হবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি করবে ইসি। ওই বছরের জুনেই নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ইসির কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা, বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নেওয়া, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ করা হবে।
এছাড়াও রোডম্যাপে বিধিবিধান অনুসরণ করে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চালু, অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ, পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম, নির্বাচনি কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোর আওতায় সম্পৃক্তকরণ ও ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইসির পরিকল্পনার মধ্যে যে বিষয়গুলো বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে সেগুলো হলো- ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্র্নিধারণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন প্রণয়ন। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী মাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ হবে। একই মাসে নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ ও আগামী নভেম্বরে নারী নেত্রীদের সঙ্গেও সংলাপ হবে। এছাড়া ওই মাসেই সুপারিশমালার খসড়া চূড়ান্তকরণ ও ডিসেম্বরে সুপারিশমালা চূড়ান্তকরণ করা হবে।
এ সময় কমিশনাররা বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সেজন্য আমরা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। আমরা বিশ্বাস করি সব পক্ষ যদি সহযোগিতা করে তাহলে এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিশনার আহসান হাবিব খান সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, রোডম্যাপ বাস্তবায়নে নূন্যতম ঘাটতি থাকলে অবশ্যই আমাদের বলবেন। আমরা আসলে কিছুটা আস্থার ঘাটতির মধ্যে আছি। তবে এতদিন কাজ করার মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি যে আগের থেকে আস্থা কিছুটা হলেও বেড়েছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা হলেন আমাদের চোখ, কান। আপনাদের ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। অনেককে আমি জিজ্ঞেস করেছি আমাদের কাজের মূল্যায়ন কিভাবে করবেন? তারা বলেছেন ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ আগের চেয়ে ভালো। আশা করি শেষ দিন পর্যন্ত আপনারা এটা বলতে পারবেন।
তিনি বলেন, রোডম্যাপ গতানুগতিক নয়। কিছুটা ভিন্নতা আছে। এসময় অন্য কমিশনাররাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন। কমিশনার আনিসুল হক বলছেন, নয়টি বিষয় সামনে রেখে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের আপত্তি সত্ত্বেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তে অনড় নির্বাচন কমিশন। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দুই লাখ ইভিএম কেনা এবং আগেরগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সংস্থাটি। তবে প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। চলতি মাসেই সরকারের অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ইতিমধ্যে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করেছে। মঙ্গলবার কমিশন সভায় প্রকল্পটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভাটি স্থগিত করে কমিশন। আগামী সোমবারে কমিশনের পরবর্তী সভায় প্রকল্পের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে।