স্টাফ রিপোর্টার – সেপা চুক্তি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ডিসেম্বর নাগাদ দুই পক্ষ বসে ভারতের সঙ্গে সেপা চুক্তির বিষয়ে সমাধান করা হবে। ইন্দোনেশিয়াসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে পিটিএ-এফটিএ চুক্তি করার চেষ্টা চলছে। শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) এমন এক চুক্তি, যার লক্ষ্য বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ানোর অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে গেলে আমদানি-রপ্তানির প্রশ্ন আসবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসা সহজ করতে বন্দর ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পেলে বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম আমদানি করা হবে। তিনি বলেন, দাম নির্ধারণ হবে আলোচনার মাধ্যমে। ভারত থেকে ডিম আমদানি করে কম মূল্যে ভোক্তাদের দেওয়ার পক্ষে আমি। আজই (শনিবার) কৃষি মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন পণ্যের দাম নির্ধারণ বিষয়ে কাগজ পাঠাব। তবে কৃষকদের স্বার্থের বিষয়টিও দেখতে হবে।
‘মিট দ্য ওকাব উইথ টিপু মুনশি’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি বলেন, আমাদের ভোক্তা ও কৃষক উভয়কেই দেখতে হবে। যথেষ্ট হিমাগার না থাকায় অনেক পেঁয়াজ পচে যায়। ফলে সেপ্টেম্বরে আমাদের পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ উৎপাদন করার চিন্তা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা চীন থেকে কিছুটা সরে আসছি। তারপরও আমাদের আমদানিতে চীন-ভারতের ওপর নির্ভরতা আছে। মূলত আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এই নির্ভরশীলতা থাকবে। বৈশ্বিক চাওয়া মেন মেইড ফাইবার আমাদের নেই। তাই বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যে যাবে না, তা এখন বুঝা যাচ্ছে। যদিও প্রথমে তাদের মানবিক কারণে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার মাধ্যমেই মিয়ানমারের সঙ্গে বানিজ্যক সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। মিয়ানমারে কিছু গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ায় আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থাকলেও তা আমাদের বাণিজ্যে প্রভাব ফেলবে না। গতবারের তুলনায় এবার ২০ শতাংশ বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ডলারের মূল্যের বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা চাই রেডিমেড গার্মেন্টস তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখুক। পাশাপাশি আইসিটি ও চামড়া খাতে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ১০টি আইটেমের উৎপাদন বাড়াতে পারলে আমাদের রপ্তানি বাড়ব। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি এটি বাড়াতে।
টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর অত্যন্ত সফল হয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে কতগুলো আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয়েছে। ওকাবের আহ্বায়ক কাদির কল্লোলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ওকাব সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মিঠু-সহ ওকাব নেতারা।
অস্বাভাবিকভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৩১ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, ডিম, রড ও সিমেন্টের দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার একদিন পরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানালেন, ভোজ্যতেল ও চিনি ছাড়া অন্য পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার তার মন্ত্রণালয়ের নেই। কৃষি মন্ত্রণালয় চাল, আটা, ডাল, ডিমের দাম বেঁধে দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। ফলে এসব পণ্যের দাম নির্ধারণ নিয়ে এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় কয়েকটি পণ্যের ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছে। ২০১৮ সালের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চাল, আটা, ডাল ও ডিমের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের। এখন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে দাম নির্ধারণ হবে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় ডলারের বাজারের অস্থিরতা, ভারত ও চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, মিয়ানমারেও আগ্রাসন, এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।