Search
Close this search box.

দেশ রক্ষার দায়িত্ব কি একা বিএনপির? – ফখরুল

এবার বিভাগীয় গণসমাবেশের ঘোষণা বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার – বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার গোটা জাতিকে গত ১২ থেকে ১৫ বছরে বিভক্ত করে ফেলেছে। জাতিকে সামনের দিকে নিয়ে যায় ঐক্য, যেটা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব করেছিলেন। ’৭৫ সালে এসে তিনি সেই বিভক্তি দূর করে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সামনের দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখান থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। এটা কি একা বিএনপির দায়িত্ব? সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং কিংবদন্তি গীতিকার চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফখরুল বলেন, এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। বিএনপির চেষ্টা করছে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে। কিন্তু সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এর ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যে স্বপ্ন তা নষ্ট হচ্ছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসবের জন্য আজকের শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে দায়ী বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনে জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। এমন একটা জায়গা পাবেন না, যেখানে আপনি দেখবেন যে বিভক্তি নেই। মসজিদের কমিটি সেখানে ভাগ, স্কুলের কমিটি সেখানেও ভাগ, মাদ্রাসার কমিটি সেখানেও ভাগ, গানের স্কুলে সেখানেও ভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়েও সেখানে ভাগ, কলেজেও ভাগ- সবখানে ভাগ। এই যে বিভক্তি কোনো জাতিকে কখনও সামনের দিকে নিয়ে যাবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, সংগ্রাম করে-লড়াই করে আমদেরকে সেই বাংলাদেশকে তৈরি করতে হবে-যে বাংলাদেশ হারিয়ে গেছে। রাষ্ট্রব্যবস্থাকে সরকার ‘দলীয়করণ’ করে ভাগ করে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি মাঝেমধ্যে বলি, সময়টাই মনে হচ্ছে যে একটা নষ্ট সময়, এটা একটা নষ্ট সময়। সবকিছুকে এরা (সরকার) নষ্ট করে ফেলছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে, মিথ্যাচার ও দুর্নীতি নেই।

ফখরুল বলেন, আপনি বিচারালয় যান, বিচার পাবেন না। আপনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর কাছে যাবেন নিরাপত্তার জন্য, সেখানে নিরাপত্তা পাবেন না। আগে বলবে, তুমি বিএনপি করো না আওয়ামী লীগ করো। যদি বিএনপি করো, কোনো কিছু হবে না। উপরন্তু আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দেবে। ঢাকা দক্ষিণে ছাত্রদলের তিনজন কর্মী রাতে বাসায় যাচ্ছিল। ওই সময়ে তাদেরকে আক্রমণ করে আহত করা হয়েছে। মামলা দিতে গেলে উল্টো ওদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর মারা যান গাজী মাজহারুল আনোয়ার। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বর্ণাঢ্য জীবন-কর্ম তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব ও ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, গাজীপুরের সভাপতি ফজলুল হক মিলন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের এম আবদুল্লাহ, প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সহধর্মিনী জোহরা গাজী ও ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল বক্তব্য রাখেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার আমাদের মাঝে একটি নক্ষত্রের মতো ছিলেন বাতিঘর। তিনি বলেন, তার ব্যবহার অমায়িক। কারো বিরুদ্ধে কখনো সমালোচনা করতে শুনিনি। চরম বেয়াদব মানুষ তার বিরুদ্ধে কখনো লেখালেখি করলেও তিনি উচ্চ বাক্যে তার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বপ্ন দেখা ছাড়া ভালো গান লেখা যায় না। স্বপ্ন দেখা ছাড়া ভালো কবিতা লেখা লেখা যায় না। তেমনি স্বপ্ন দেখা ছাড়া একটি ভালো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় না। তাই সেই স্বপ্ন দেখা মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে, টিকিয়ে রাখতে হলে, তাদেরকে তৈরি করতে হলে রাষ্ট্রের প্রটেকশন দরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের যত উন্নয়ন তার ভিত্তিটা স্থাপন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর সেটা গাজী মাজহারুল হক খুব ভালো করে জানতেন। এই সমস্ত সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল মানুষেরা যখন রাজনীতির পরিমণ্ডলে আসে তখন তারা পুরোপুরি মূল্যায়ন পায় না।

তিনি বলেন, জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ’৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার যে গান, অনুপ্রাণিত করার যে গান তার মধ্যে গাজী মাজহারুল ইসলামের অনেক গান রয়েছে। সে জাতিকে আজ এই শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগ সরকার বিভক্ত করে ফেলেছে। এটা শুধু আজকে করছে তা নয়, ’৭২ সালের পরে যখন তারা ক্ষমতায় এসেছিল তখন তারা এই কাজটি করেছিল। আজকে আবার এই ১২ থেকে ১৫ বছরে গোটা জাতিকে বিভক্ত করে ফেলেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সমাজকে একেবারে নষ্ট করে ফেলেছে মিথ্যাচার, অনাচার দুর্নীতি। আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে একটি পার্লামেন্ট গঠন হবে, সরকার গঠন হবে, সেই নির্বাচনে জনগণ অংশ নিতে পারে না, তবে সেটা কিসের নির্বাচন? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ