Search
Close this search box.

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘ থেকে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

* একজন কাউন্সিলরও যদি না চান, আমি থাকব না
* বিএনপি নির্বাচনে আসুক, কার কত জনপ্রিয়তা বোঝা যাবে
* মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি
* আমাদের ৫ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে
* র‌্যাবের ট্রেনিং আমেরিকায়, তাদের কার্যক্রমও সেইরকমই
* সবচেয়ে বেশি গুম হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে

মিথুন আশরাফ – আমি অবশ্যই চাই আওয়ামী লীগে নতুন নেতৃত্ব আসুক। দীর্ঘদিন হয়েছে, আমি বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন এমন কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেতৃত্ব কাউন্সিলররা ঠিক করেন। কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত। আওয়ামী লীগে একটি কাউন্সিলর যদি বলে যে আমাকে চায় না সেদিন থেকে থাকবো না। আমার অবর্তমানে যখন আমাকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট করেছিল তখন থেকেই এই শর্ত মেনে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমার তো ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় পরিণত হয়েছি। এখন আমি বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।

জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সফল বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সব সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে বলে আমি আশাবাদী।
তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরে অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু কার্যক্রমের প্রসারের জন্য আমি বিশ্ব নেতাদেরকে আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির ব্যবহারে সবার ন্যায্য ও সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন দূর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বলেও জানান তিনি। মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার অভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে তাদের দেখভাল করছি। এখন বৈদেশিক সাহায্য অনেক কমে এসেছে। তারপরেও রোহিঙ্গাদের আমরা দেখছি। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা পাচ্ছি না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে আসছে। মানবিক কারণে নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িক আশ্রয় দিয়েছি।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে তাদের নিজ দেশে ফিরতে পারে সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘ ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে আজকে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ক্যাম্পগুলো মাদকের আখড়ায় পরিণতে হয়েছে। তারা দেশান্তরী হচ্ছে। কিন্তু সঠিক দেশে পাড়ি জমাতে না পেরে উল্টো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা মালয়েশিয়া যাবে বলে নৌকায় উঠে হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয় সীতাকুণ্ড বা সোনাদিয়া আসছে কেউ কেউ নৌকা ডুবে মারা যাচ্ছে। দালালদের চক্রে পড়ে তাদের জীবন নষ্ট হচ্ছে।
এসময় মানবিক আশ্রয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছি। এখন তো আমরা তাদের ফেলে দিতে পারি না। আমরা যখন আশ্রয় দিয়েছিলাম তখন বলেছিলাম আমরা এক বেলা হলেও তাদের খাওয়াব। আমরা সেটা করছি। আমরা মিয়ানমারকেও বলেছি তাদের ফিরিয়ে নিতে।

এর আগে বঙ্গবন্ধুকন্যা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে পাঁচ দফা প্রস্তাবও তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আইসিজেতে গাম্বিয়াকে সমর্থন করাসহ আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারকাযের্র পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক ও আর্থিকভাবে সমর্থন করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং মিয়ানমারকে আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐকমত্যের অধীনে তার অঙ্গীকার মেনে চলার জন্য জোর দিতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নাগরিকত্বের পথ সুগম করাসহ রাখাইন রাজ্য বিষয়ক কফি আনান উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশসমূহ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়নে তাদের ব্যাপক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা উচিত। বেসামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের অর্থবহ উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের আস্থা বাড়াবে।

শেখ হাসিনা বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে অভিহিত করেন যে একজন রোহিঙ্গাকেও ঘরে ফিরতে না দেখা অবস্থায় বাংলাদেশ এ প্রলম্বিত সংকটের ষষ্ঠ বছরে পা দিয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সংকটের উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং এর সমাধানও সেখানেই রয়েছে। ১৯৬০ সালের পর থেকে মিয়ানমারের ধারাবাহিক সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে বর্জন ও নির্বিচার নিপীড়ন অব্যাহত রাখায় তারা (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে অব্যাহত অনুপ্রবেশের দিকে চালিত হয়।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (এফডিএমএন) মোট সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান আমাদের উন্নয়ন আকাক্ষার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের প্রতি বছর প্রায় ১.২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করতে হয়। এতে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ একর জমির বনভূমির ক্ষতি এবং স্থানীয় জনগণের ওপর এর বিরূপ প্রভাব অপরিমেয়।
জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে রাশিয়া-ইউক্রেন বিরোধ নিরসনের আহ্বান জানানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তির জন্য অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে অধিক পারস্পরিক সংহতি প্রদর্শন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করি। এসব সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা-নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই। চলমান সঙ্কট নিরসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ও উন্নয়ন ভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরি।

আমাদের ৫ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে; তাঁরা প্রত্যেকে বলেছে, ২০২৩ সাল বিশ্বে দুর্যোগ ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। আপনারা জানেন, এমনিতে আমাদের দেশ দুর্যোগপূর্ণ দেশ। বিশ্বব্যাপী এমনিতে অর্থনৈতিক সংকট। তাই আমরা দেশের নাগরিক দলীয় নেতাকর্মী সবাইকে বলে রেখেছি, আগামী বছর হবে খাদ্য সংকটের বছর। সেজন্য কোন জায়গা ও জলাশয় যেন খালি না থাকে। সেজন্য আমরা খাদ্য সংকট মেটাতে কৃষিখাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এ জন্য সকল প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ২০২৬ সালের মধ্যেই অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের কোথাও কোনো জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিভিন্নভাবে সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা ক্ষমতায় আসার পর চেষ্টা করেছি দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করার। কিন্তু, ষড়যন্ত্রকারীরা বসে থাকেনি। তারা আমাদের থামানোর চেষ্টা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রিজার্ভ রয়েছে। আমাদের পাঁচ মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ রয়েছে। আমরা যতই ঋণ নেই না কেন, কোনো ঋণ পরিশোধ ছাড়া থাকেনি। আমাদের বাজেটের দিক থেকে কোনো সংকট নেই। যেসব প্রকল্পগুলো দ্র্রুত শেষ করা যায় সেগুলো আগে নিয়েছি। এক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোকে তিনভাগে ভাগ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ ছাড়া বেসরকারিখাতকেও শক্তিশালী করেছি। তবে, জনগণকে এক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। দেশের অর্থনীতি যেন সচল থাকে, সেদিকে যেন নজর দিচ্ছি। কিছু মিডিয়া রয়েছে যতই ভাল কাজ করি তাদের চোখে পড়ে না। আমরা যখন ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসলাম তখন দেশের অর্থনীতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল সেখান থেকে আমরা চেষ্টা করেছি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু, গ্যাস বিক্রি না করাই পরে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। তাহলে বোঝেন, যদি গ্যাস বিক্রি করে দিতাম, তাহলে এখন কী অবস্থা হতো। এখন অন্ধকারেই থাকতে হতো।
র‌্যাবকে আমেরিকা যেমন ট্রেনিং দিয়েছে তেমনি কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, র‌্যাব তো আমেরিকার পরামর্শে তৈরি। তারা পরামর্শ দিয়েছে, তাদের ট্রেনিং দিয়েছে। অস্ত্র-শস্ত্রও আমেরিকার দেওয়া।

র‌্যাবের অপরাধের অভিযোগ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, র‌্যাবকে আমেরিকার যেমন ট্রেনিং, তেমন কার্যক্রম। ট্রেনিংটা যদি ভালো হতো- এ বিষয়ে আমরা কী করতে পারি? প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- এই নীতিতে আমরা বিশ্বাস করি। কারও সঙ্গে ঝগড়ায় যাই না।

সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নানা সময়ে স্যাংশন দিয়েছে। আমাদের দেশের কিছু লোক আছে যারা স্থানীয় সিনেটর ও কংগ্রেস ম্যানকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। সেই সঙ্গে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করতেই থাকে। এরা কারা, কোনো না কোনো অপরাধ করেই দেশ ছাড়ে কিংবা চাকরিচ্যুত।

তিনি আরও বলেন, একাত্তরে যারা দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তাদের বিচার তো আমরা করেছি। কিন্তু তাদের ছেলে-মেয়ে আছে। দেশ থেকে বিদেশে টাকা-পয়সা নিয়ে গেছে। তারা তো আর থেমে নেই। তারাও অপপ্রচার করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব হোক, পুলিশ হোক তারা কোনো অন্যায় করলে বিচার হয়। কিন্তু তাদের দেশে তো কোনো বিচার হয় না। একটার বিচার হয়েছে। যখন লোকজন রাস্তায় নামল, তখন তারা ওই একটার বিচারই করেছে। আর কোনো বিচার হয় না।

শেখ হাসিনা বলেন, সবচেয়ে বেশি গুম হয়েছে জিয়াউর রহমানের আমলে। আমরা গুমের তালিকা চাইলাম। তালিকা পাওয়া গেল ৭৬ জনের। ভারত থেকে কিছু নাগরিক পলাতক। গুমের তালিকায় তাদের নামও ছিল। আমেরিকা স্যাংশন দিয়েছে, সেটি তুলবে কি না জানি না। কিন্তু তারা যা ক্ষতি করেছে। এই স্যাংশন দেওয়ার অর্থ হলো সন্ত্রাসবাদের মদত দেওয়া। কেননা র‌্যাব জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমন করেছে। সন্ত্রাস দমনে কি তারা নাখোশ?
শেখ হাসিনা বলেন, আফগানিস্তানে ৪০ বছর যুদ্ধ করল। শেষশেস তালেবানের হাতে ক্ষমতা দিয়েই চলে গেল। নিজেদের ব্যর্থতার কথা তো বলে না কোথাও। ভিয়েতনামে ৩০ বছর যুদ্ধ করল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ নিল। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে একের পর স্যাংশন দিচ্ছে। মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। এটি কেমন কথা? আমি জাতিসংঘেও বলেছি, এই যুদ্ধ থামাতে হবে।
এর আগে, এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘের রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গেও কথা হয়েছে। রোহিঙ্গারা একের পর এক আত্মঘাতী হচ্ছে। নৌকায় উঠে মালয়েশিয়ায় যাবে বলে বেরিয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, শরণার্থী সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য কতটুকু করবে তা জানি না। আমরা তো রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের আমরা ফেলে দিতে পারি না। বৈদেশিক সহায়তা অনেক সীমিত হয়ে আসছে। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের তো আর ফেলে দিতে পারি না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। আপনাদের লোক আপনাদের ফেরত নিয়ে যান। তাদের ফেরত নিয়ে যাওয়া উচিত।
বিরোধি রাজনৈতিক দল নিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক হুমকি দিচ্ছে। এটাই তো তাদের কাজ। তারা যদি শক্তিশালী হতো, তাহলে অনেক কিছুই হতে পারতো।
তিনি বলেন, দেশ আমাদের। সেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অধিকারের আন্দোলন-সংগ্রাম, হুমকি-ধামকি অনেক কিছুই পাওয়া যাচ্ছে। সেটা তো বিরোধী দলের কাজ। তা না করলে কিসের বিরোধী দল। বিরোধী দল যদি শক্তিশালী হতো তাহলে তো অনেক কিছুই হতো।
তিনি বলেন, আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা আছে, সব সময় নেতিবাচক চিন্তা। এরকম মানুষও আছে। তবে সেটা নিয়ে আমার মাথাব্যাথা নেই। জনগণের যেন কষ্ট না হয় আমি সেদিকে দৃষ্টি দেই।
শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, ১ বিলিয়ন রিজার্ভ, ৪৪ মিলিয়ন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে ৯৬ সালে সরকার গঠন করেছিলাম। তবে আমরা যখনই আসি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী এটা আমি নিশ্চিত করতে পারি, বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ সকল সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ বহুপাক্ষিক ফোরামে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন আরও সুদৃঢ় করেছে, তেমনি বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করবে।
তিনি বলেন, সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি। শেখ হাসিনা জানান, ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রতিবারের মত এবারও বাংলায় বক্তব্য রাখেন।
বিশ^শান্তি অর্জনের লক্ষ্যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা ও শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন চলাকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রপতি, ইকুয়েডরের রাষ্ট্রপতি, কসোভোর রাষ্ট্রপতি, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ইউএন হ্যাবিট্যাট-এর নির্বাহী পরিচালক, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক, জাতিসংঘের হাই রিপ্রেজেনটেটিভ, গ্লোবাল এফেয়ার্স মেটা’র প্রেসিডেন্ট, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের নির্বাহী চেয়ারম্যান এবং জাতিসংঘের মহাসচিব। এ সকল দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি পারস্পরিক ও বৈশি^ক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সফরের সময় ২৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। নিউইয়র্কে অবস্থানকালে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি এবং ভয়েস অব আমেরিকা তাঁর সাক্ষাৎকার নেয় বলেও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কয়েকজন সংসদ সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভা এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যান এবং ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। ওয়াশিংটন ডিসি-তে অবস্থানকালে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম এনার্জি-এনভায়রনমেন্ট নিউজ, সিবিএস, ওয়াশিংটন পোস্ট এবং দ্য পলিটিকো তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এসব সাক্ষাৎকারে জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সঙ্কট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বৈশি^ক সঙ্কট এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়সমূহ উঠে আসে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন, ব্রিটেনের প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশে তিনি ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে লন্ডনের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
তিনি এবং ছোটবোন শেখ রেহানা ১৮ সেপ্টেম্বর বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে যুক্তরাজ্যের রাজার এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। ওয়েস্ট মিনস্টার প্যালেসের হলে শবাধারে সংরক্ষিত প্রয়াত রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। পরে ল্যাঙ্কাস্টার হাউসে রাখা শোক বইতে প্রধানমন্ত্রী বাংলায় লিখেন, আমি, বাংলাদেশের জনগণ, আমার পরিবার এবং আমার ছোটবোন শেখ রেহানার পক্ষ থেকে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ শোক বইয়ে রেহানা লিখেন: ‘তিনি আমাদের হৃদয়ের রানী এবং সব সময় থাকবেন।
অন্যান্য বিশ্বনেতাদের সঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট মিনস্টার অ্যাবেতে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে প্রধানমন্ত্রী যোগদান করেন। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রীগণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোসহ বিশে^র কয়েক শ’ বিশিষ্ট ব্যক্তি শেষকৃত্যে যোগ দেন বলে তিনি জানান।
এর আগে, ১৬ সেপ্টেম্বর কনফেডারেশন অফ ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রির (সিবিআই) প্রেসিডেন্ট চেলসির লর্ড করণ বিলিমোরিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে লর্ড বিলিমোরিয়ার প্রয়াত পিতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল ফরিদুন বিলিমোরিয়ার অবদানের কথা স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানাই। লর্ড বিলিমোরিয়া বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় এবং লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি যুক্তরাজ্য জুড়ে লেবার পাটি থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। একই দিন মেরিলেবোনের লর্ড স্বরাজ পালও আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া, বিবিসি’র প্রখ্যাত সাংবাদিক ও উপস্থাপক লরা কুয়েন্সবার্গ আমার একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত ট্রান্সফর্মিং এডুকেশন সামিট – এ ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। ২০-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ৭৭তম অধিবেশনের সভাপতি সাবা করোসির আমন্ত্রণে বিশে^র নারী নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী অংশগ্রহণ করেন এবং সভায় তিনি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নারী সমাজের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে নারীর সামাজিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্বের সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করি। এ ছাড়া, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে বিশ^ নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২১ সেপ্টেম্বর আমি বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, স্লোভাক রিপাবলিক এবং ইউএন হ্যাবিট্যাটের যৌথ আয়োজনে টেকসই আবাসন বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি। এ সভায় আমি টেকসই আবাসন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সাফল্য যেমন গৃহহীন ও ভূমিহীন জনগণের জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্প, গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নের জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উদ্যোগ, ‘ঘরে ফেরা’ প্রকল্পের কথা তুলে ধরি।
তিনি বলেন, একই দিন আমি গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) এর চ্যাম্পিয়ন হিসেবে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করি। এই সভায় জাতিসংঘ মহাসচিব, জার্মানির চ্যান্সেলর, সেনেগালের রাষ্ট্রপতি, বারবাডোসের প্রধানমন্ত্রী এবং ইন্দোনেশিয়া ও ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীগণ অংশগ্রহণ করেন।
বৈশি^ক আর্থিক সঙ্কট মোকাবিলায় জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক -কে আরও জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়া, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সুনিদিষ্ট যেসব রাজস্ব ও আর্থিক নীতি বাস্তবায়ন করছে সেগুলি অবহিত করি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে অভ্যর্থনা সভায় আমি অংশগ্রহণ করি। এ সময় আমি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাই।
তিনি জানান, ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই লেভেল সাইড ইভেন্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া এবং বাংলাদেশ যৌথভাবে এই হাই লেভেল সাইড ইভেন্টটি আয়োজন করে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে তিনি ৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবসমূহ হলো: রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক সমর্থন ও মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা; আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, জাতীয় আদালত এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে চলমান মামলায় সমর্থন প্রদান; জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত দমন-পীড়ন বন্ধে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা; আসিয়ানের পাঁচ-দফা ঐক্যমতে মিয়ানমারের অঙ্গীকারসমূহ এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করা; মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারীদের নির্বিঘ্নে প্রবেশ নিশ্চিত করা।
ওই দিন তিনি এবং বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেসিসটেন্স বিষয়ে “ওয়ান হেল্থ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন এএমআর” শীর্ষক গ্রুপের সভায় যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন প্রধানমন্ত্রী ইউএস বাংলা বিজনেস কাউন্সিল-এর আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এ বৈঠকে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ¦ালানি, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, চিকিৎসা শিল্প, সামুদ্রিক শিল্প, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বেশ কয়েকটি হাই-টেক পার্কসহ বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চলগুলিতে বিনিয়োগের জন্য মার্কিন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানান বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে যোগদান উপলক্ষে লন্ডন সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে টানা ১৮ দিনের সফর শেষে সোমবার (৩ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টার দিকে ঢাকায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডন সফর শেষে তিনি নিউইয়র্ক যান। ২৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত রোববার (২ অক্টোবর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে রওয়ানা হয়ে লন্ডনে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি দিয়ে সোমবার দিবাগত রাত ১টায় ঢাকায় ফেরেন তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ