স্টাফ রিপোর্টার – রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের জান্তা সরকার রাজি হয়েছে। এমনটিই জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের কিভাবে নেওয়া হবে সে ব্যাপারে প্রস্তুতি চলছে।
এরআগে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজভূমে ফেরানোর বিষয়ে প্রচেষ্টার অগ্রগতি জানতে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। বৃহস্পতিবার সকালে ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠক শেষে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, চীনের মধ্যস্ততায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার। তবে কবে নাগাদ রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কোনো কিছু বলতে পারেনি চীন। আবার মিয়ানমারও নাকি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। যারা কিনা দেখাতে পারবে, তারা মিয়ানমারের বাসিন্দা, তাদেরই নেওয়া হবে। এদিকে রোহিঙ্গারাও ফিরে যাওয়ার খবরে খুশি। তবে কবে যেতে পারবেন, তা নিশ্চিত নয়। কারণ, এরআগেও আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সরকার ওখানকার দলিল চায়। সেটা একটা সমস্যা। অনেকের কাছেই ডকুমেন্ট নেই। বাংলাদেশ দলিলের জটিলতায় যেতে চায় না। নিতে হলে সবাইকেই নিতে হবে। তিনি বলেন, বর্ডারের জিরো লাইনে ৫ হাজার রোহিঙ্গা আছে। চীনকে বলেছি তাদের মিয়ানমারের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর সেখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন-নিপীড়ন শুরু করে সেনাবাহিনী। মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইনে সেনাবাহিনীর অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। এসব পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের প্রতি অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করে আসছে। উভয় দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে প্রত্যাবাসন চুক্তিও।
চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার অধীনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য একটি চুক্তি সই করে, কিন্তু প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে আছে। বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় প্রক্রিয়ার ধারণাটি নিয়ে চার বছর আগে নিউইয়র্কে কয়েকটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য পদক্ষেপ নিতে পটভূমির পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হয়েছিল।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জিমিং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তারা মিয়ানমারের পক্ষের সঙ্গে যেসব কথা বলেছেন তার ভিত্তিতে তারা ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফলাফল’ তুলে ধরতে যাচ্ছেন। মিয়ানমারের আশ্বাস দিলেও গত পাঁচ বছরে একজনক রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি দেশটি। বাংলাদেশ কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। ১৩ অক্টোবর চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে, একটি নির্দিষ্ট দেশের একতরফা প্রচেষ্টা নয় বরং রোহিঙ্গা ইস্যুটির মূল বিষয় হচ্ছে স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয়েই চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হওয়ায় আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সহায়তার জন্য চীন কাজ করছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, যদিও মিয়ানমারের বর্তমান অভ্যন্তরীণ অবস্থা এখনো অনিশ্চয়তার সম্মুখীন তবুও ‘চীনের মধ্যস্থতায়’ উভয় পক্ষের মধ্যে যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়নি এবং প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমারের বর্তমান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার বিষয়ে বাংলাদেশ বৃহস্পতিবার চীনা পক্ষের কাছ থেকে সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইতে পারে, তা আগেই জানা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে দেখা করবেন। যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি উত্থাপন হবে। মিয়ানমারের আশ্বাস সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে একজনকেও ফেরত নেয়া হয়নি।