স্টাফ রিপোর্টার- কলকাতায় বাংলাদেশে গণমাধ্যমে কর্মরতদের শুধু দুই দেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে নয়, গণমানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শনিবার কলকাতায় ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি এমন আহ্বান জানান। কলকাতার নন্দনে বাংলাদেশ চতুর্থ চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনাও করেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
এদিন কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন স্প্রি ক্লাবে ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে আগত প্রতিনিধিদের সংবর্ধনা জানান হয়। ইন্দো-বাংলা প্রেসক্লাবের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী। এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী রথীন ঘোষ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, বেসরকারী টিভি চ্যানেলের এমডি মোজাম্মেল বাবু, সম্পাদক নঈম নিজাম, সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, প্রকাশক সন্তোষ শর্মা, কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি স্নেহাশীশ সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক প্রমুখ।
এসময় বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কলকাতায় কর্মরত প্রতিনিধিদের এ ধরনের একটি সংগঠন গড়ে ওঠায় মুগ্ধতা প্রকাশ করেন তথ্যমন্ত্রী। এরপর কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘মিট দ্যা প্রেসে’ অংশ নেন তথ্যমন্ত্রী।
এদিকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যসহ বিনা শুল্কে পণ্য রফতানির সুযোগ, যেটির জন্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করে এসেছে।’
সফল ভারত সফর করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য অনেক কিছু নিয়ে এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অথচ এই ভারত সফর নিয়ে বিএনপি নানা ধরনের কথা বলেছে। এখন নিশ্চয়ই চুপসে গেছে। কিন্তু এরপরও বিএনপির ফখরুল সাহেবরা আজকালের মধ্যে কিছু একটা বলবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অত্যন্ত চমৎকার ও ফলপ্রসূ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের সরকারই ভারতের কাছ থেকে সমস্ত কিছু আদায় করেছে। ১৯৭৪ সালে ছিটমহল চুক্তি হয়েছে। সেই ছিটমহল আমাদের অধিকারে চার দশকে কেউ আনতে পারেনি। তারা কোন দেশের নাগরিক সেটা বলতে পারতো না। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে এনেছে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে যে সম্পর্ক সেটির বড় প্রমাণ হচ্ছে, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সঙ্গে মামলা করে সমুদ্রসীমা জয়লাভ করেছি।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাদকসহ মাত্র ২০টি পণ্য ছাড়া ভারত আমাদের অন্যান্য পণ্যে ট্যারিফ সুবিধা দিয়েছে। যেটি বিএনপি আদায় করতে পারেনি। খালেদা জিয়া তো ভারতে গিয়ে আমাদের গঙ্গার পানি হিস্যার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। সেটিও আদায় করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার হাত ধরে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাংবাদিকদের দাবি ছিল, একটা কল্যাণ তহবিল গঠন করার। প্রথমে একটা কল্যাণ তহবিল গঠন হয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী বললেন, আমি কতদিন থাকি ক্ষমতায় জানি না, একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করে দিতে চাই। তারই আগ্রহে সংসদে পাস করা আইন দ্বারা সংবিধিবদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। যেখানে প্রতি বছর সরকার অনুদান দেয়। শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকেও অনুদান গ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু মাঝে মধ্যে দেখি বিশ্ব পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা হয়। কিছু কিছু সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বিশ্ব পরিস্থিতিকে আড়াল করে বাংলাদেশের পরিস্থিতিটাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায়। এটি নতুন কিছু নয়। পদ্মা সেতু যখন আমরা নির্মাণ শুরু করি তখনও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর যেভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল, কিন্তু বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে হেরে যাওয়ার পর তারা ক্ষমা চায়নি।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশের প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউজ যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বিমার ব্যবস্থা করে সে অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটি কিন্তু আমাদের ওয়েজ বোর্ডের মধ্যেও বলা আছে। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো প্রতিটা মিডিয়া হাউজে তাগাদা দেবেন ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী যেন সাংবাদিকদের জন্য গ্রুপ বিমার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এটি করলে একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে এবং মৃত্যুবরণ করলে বিমা কোম্পানি থেকে টাকা পাবে। এতে যে খুব ব্যয় হয় তা কিন্তু নয়, এটি ইচ্ছা ও চর্চার বিষয়।