স্টাফ রিপোর্টার – নিশি রাতের অবৈধ সরকারের লুটপাটের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ জেগে উঠেছে। রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহের গণসমাবেশই তার প্রমাণ। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমনটিই বলেছেন। বুধবার বগুড়া জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গণতন্ত্র হরণকারী সরকার পরিবহন বন্ধ করে কোনোভাবেই জনস্রোত ঠেকাতে পারেনি। এই ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতা ছেড়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দেওয়া পর্যন্ত বিএনপি তথা জনগণ আর ঘরে ফিরবে না। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লুটপাটের প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য চলমান আন্দোলনে পাঁচ জনের প্রাণ গেছে। ৬০০ বিএনপি নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলেও দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যায়। অতীতে যে মানুষ না খেয়ে মরেছে, সামনেও তেমনি অবস্থার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। বিএনপি নানা সংকটের সময়ে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করেছে। এখনো বিএনপির ওপর মানুষ আস্থা রেখে অপেক্ষা করছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আর নির্বাচন নির্বাচন খেলা নয়, অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। গঠন করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকারের অধিনে গঠন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশন। ভবিষ্যতে নির্বাচন হবে সেই সরকারের অধিনে।
তিনি বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে চলমান বিভাগীয় মহাসমাবেশ গুলোকে ঘিরে সারাদেশে মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে তাতেই ভয় পেয়েছে সরকার। ভীত প্রধানমন্ত্রী বলছেন, হেফাজতের মত বিএনপিকেও সাইজ করা হবে। এর মাধ্যমে তিনি প্রমান করলেন হেফাজতের হত্যায় তিনি জড়িত। প্রধাণমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাগরে পেতেছি শয্যা শিশিরে ভয় কি?
তিনি বলেন, এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে রিজার্ভ গিলে খাওয়ার গল্প। খাদ্য শস্য আমদানির জন্য তাই আর ডলার পাওয়া যায়না। তিনি অভিযোগ করেন, সব ডলার পাচার হয়ে যায় কানাডার বেগম পল্লীতে। মির্জা ফখরুল বলেন, যারা বলেন বিএনপি ক্যান্টনমেন্টের দল তারা এই কাউন্সিলে এসে দেখে যান, বিএনপিতে কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগ দেশে গনতন্ত্র হত্যা করেছিল। কিন্তু শহীদ জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া ৯ বছর ধরে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে আন্দোলন করেছেন। এখন দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছি। তখন তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর নামে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। অথচ তারেক রহমানের স্ত্রী রাজনীতির সাথেই জড়িত নন।
ফখরুল বলেন, বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকতে বগুড়ায় প্রথম আমাদের আজকের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন শুরু করেছিলেন। পোস্টার ছাপিয়ে মার্কা দিয়ে নির্বাচন হয়েছে। আজকে আবার সেই চিত্র দেখে আমার মন ভরে গেছে। বিএনপির জন্মই হয়েছিল গণতন্ত্রকে পুনর্জন্ম দেওয়ার জন্য। যে গণতন্ত্রকে আওয়ামী লীগ গিলে খেয়ে ফেলেছিল। যে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। সেই গণতন্ত্রকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন। আজকে ৫০ বছর পরে, আমাদের চরম দুর্ভাগ্য, এই দেশে আবার আমাকে বলতে হয় যে, আমাদের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমার ভোটের, কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, ৫০ বছর পরে এ কথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি এ বাংলাদেশ আবার পরাধীনতার জাঁতাকলে পড়েছে। আবার একটি ফ্যাসিবাদী, অগণতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার মধ্যে পড়েছে। সেদিন যেমন এই বগুড়ার সন্তান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ ৯ বছর রাজপথে ঘুরে ঘুরে আন্দোলন করেছিলেন গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, সেই আন্দোলন আজ আবার ঘোষণা করেছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আজকে যে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সারা দেশের মানুষ যে আবার জেগে উঠছে, এই জাগরণ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণের জাগরণের মধ্য দিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ এখন প্রমাদ গুণছে। তারা বুঝে গেছে তাদের পায়ের নিচে আর মাটি নেই। তারা বুঝে গেছে এ দেশের মানুষ আর তাদের সঙ্গে নেই। সেই জন্য আজকে তারা ভিন্ন পথে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তারা সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়। তারা আমাদের সংবিধানসম্মত অধিকার যে, আমি সমাবেশ-মিছিল করতে পারবো। জনগণকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো, সেটা লুপ্ত করতে যত রকমের হীন কৌশল আছে সেগুলোকে তারা আজকে ব্যবহার করছে। সমাবেশ করতে দেবে না, বারবার হুমকি। এত হুমকি কারা দেয়? যারা ভেতরে দুর্বল। তাদের গলা অনেক চড়া হয় কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ে কাঁপতে থাকে। এরা হচ্ছে সেই দল। প্রত্যেকটা সমাবেশে তারা পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে দুদিন আগে থেকে। তারা অত্যাচার করেছে, আক্রমণ করেছে। সম্মেলনে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।