স্টাফ রিপোর্টার – বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার ১০ বছরের জেল হয়েছে। হ্যাঁ, অসুস্থ, বয়োবৃদ্ধ, তার বোন, ভাই, বোনের জামাই আমার কাছে এসেছে, আবেদন করেছেন, আমরা তার সাজাটা স্থগিত করে তাকে বাড়িতে থাকার সুযোগটা দিয়েছি। মানবিক কারণেই দিয়েছি। কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করলে, যদি ওরা বেশি বাড়াবাড়ি করে, বিএনপি যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে আবার জেলে পাঠিয়ে দেবো।
বিএনপিকে ছাড় দেওয়া হবে না হুঁশিয়ার করে শেখ হাসিনা বলেন, অবৈধ সরকার, ক্ষমতা দখলকারীর দ্বারা গঠিত অবৈধ দলগুলো আজকে খুবই লাফালাফি করে, খুব ভালো কথা। আমরা বলেছি শান্তিপূর্ণ মিছিল, মিটিং করো, আমরা কিছুই করবো না। কিন্তু ঐ যে লাঠিসোটা নিয়ে এসে ভাবসাব দেখানো, আর যদি একটা মানুষের গায়ে হাত দেয়, আমরা ছাড়বো না।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপির চলমান সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে তাঁর দলের কোনো সমস্যা নেই, যদি না সেগুলো সহিংস কর্মসূচিতে পরিণত হয়। তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল, সমাবেশ ও মিটিং করছে এবং এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের (এএলপিপি) বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে সংবাদ ব্রিফিংয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের (এএলপিপি) বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আন্দোলনের নামে কোনো সহিংস কর্মকাণ্ড চালালে তা শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে।’
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলের কেউ কাজ করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে আওয়ামী লীগ। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের গত ১৩ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সরকারবিরোধী অপপ্রচারের উপযুক্ত ও তাৎক্ষণিক জবাব দিতে বলেছেন।
এদিন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক ও বানোয়াট বক্তব্য দেওয়া ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশি ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট দেশে তাদের মেধা, শিক্ষা ও কাজের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠানোর পাশাপাশি স্বাগতিক দেশে তাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের নাম ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেন। স্বাগতিক দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষণেও তারা অনেক সময় ভূমিকা রাখতে পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, ইতিবাচক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রবাসী/অভিবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছু লোক দেশের বাইরে অবস্থান করে বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারনায় লিপ্ত হন। সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উস্কানিমূলক ও সম্পূর্ণ বানোয়াট বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির/বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
এ লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী জানান, অপপ্রচার মোকাবিলা করতে এবং বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোয় এবং অনলাইন মিডিয়াতে নিয়মিতভাবে তথ্যবহুল সংবাদ, প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশের বিষয়ে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নিয়মিত প্রচেষ্টা চলমান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে অসত্য ও অপপ্রচারমূলক সংবাদ/প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগ এসব প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল প্রতিবাদলিপি পাঠিয়ে থাকে, যা ঐ সব গণমাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচার করা হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরকারের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন-ফেসবুক পেজ ও টুইটারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানানোর মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকল্পে কাজ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগ এবং বিদেশস্থ মিশনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ বিষয়ক খবর বা আর্টিকেলগুলো নিয়মিতভাবে মনিটরিং করা হয় এবং অসত্য ও অপপ্রচারমূলক সংবাদ/প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব প্রতিবেদনের বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল প্রতিবাদলিপি ছাড়াও বিভিন্ন প্রকাশনা পাঠিয়ে থাকে, যা ঐসব গণমাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোয় এবং অনলাইন মিডিয়াতে নিয়মিত তথ্যবহুল সংবাদ, প্রবন্ধ, ফিচার, ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অপপ্রচারকারীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন পোষ্টগুলো নজরদারি করা হয়।
কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে যারা কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে বিশ্বব্যাপী যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্য মন্দার প্রভাব যেন বাংলাদেশে না পড়ে সে ব্যাপারেও সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। দেশের সংকটকালে বিরোধীরা কোনো ভূমিকা রাখে না এমন অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যখন সংকট চলে তখন বিরোধীদের মধ্যে কোনো উদ্বেগ দেখি না। বরং রাজনৈতিকভাবে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। কাউকে এক মুঠো চাল দিয়ে সহায়তা করে না।