স্টাফ রিপোর্টার – বিএনপির আমলে দেশে শুধু উন্নয়ন হয়। আর আওয়ামী লীগের আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। ফখরুল বলেন, বিএনপি যতদিন ক্ষমতায় ছিল ততদিন দেশে উন্নয়ন হয়েছে। এই বরিশালেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে বিএনপির আমলে।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সবাই স্বপ্ন দেখেছিল একটি সুন্দর দেশ গড়ার। কিন্তু আওয়ামী লীগ একে একে আমাদের সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। সব স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৪-১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ একই স্বপ্ন দেখছে এবং তারা কাজ করছে ওইভাবে যে, তারা দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েক করতে চায়। কিন্তু গণতন্ত্রের একটা খোলস বা মোড়ক রাখতে চায়।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা হয়েছে এবং তাদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা এবং মামলা হচ্ছে তাদের (আওয়ামী লীগ) একটা বড় অস্ত্র। তারা যাদের ওপর হামলা করবে আবার তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করবে।
ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের দেশের আলেম-ওলামারাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে আটক করে জেলে রাখা হচ্ছে। কেউ নিরাপদ নয়। দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে তিনি বলেন, সমস্ত টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সংকট, ডলারের সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু তখন মনে ছিল না- যখন টাকাগুলো চুরি করে পাচার করছিলেন, বিদেশে পাঠাচ্ছিলেন! তখন মনে ছিল না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, হাতিরঝিলে বড় আকারে তারা (আওয়ামী লীগ) অনুষ্ঠান করল যে, বিদ্যুতে নাকি দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন সেই বিদ্যুৎ কোথায়। কুইক রেন্টালের নাম দিয়ে সব লুট করেছে। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যে তারা চুরি করেনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন নতুন বুদ্ধি করে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। সেটি আর হতে দেওয়া হবে না। রাজপথে ফয়সালা করে দেশকে রক্ষা করা হবে।
জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, কোনো কিছুই আজকে আপনাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। টানটা কোথায়? আমার কলিজার টান। সেই টানটা তৈরি করে দিয়েছেন ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ১৪ বছর ধরে আওয়ামী লীগের সরকার নির্যাতন করছে। যারা হামলা করবে তারাই আবার মামলা করবে। এসময় দলের নিহত এক নেতার ছোট শিশুকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আজকে আমরা যে আন্দোলন করছি, এর বলি হচ্ছেন তারা (চলমান আন্দোলনে নিহত ৫ নেতা)। তিনি বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল, ক্ষমতায় এসে কি করছে? ঘরে ঘরে চাকরি দেবে বলেছে, আওয়ামী লীগের ছেলেদের চাকরি দিয়েছে। ২০ লাখ করে টাকা নিয়েছে।
বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচির মজিবুর রহমান সরোয়ার, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবীব উন নবী খান সোহেল, বিএনপি নেতা জহির উদ্দিন স্বপন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুসহ অঙ্গ ও সহযোগী দলের নেতারা বক্তব্য দেন। এছাড়া বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রথম গণসমাবেশ করে বিএনপি। এরপর ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহে, ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, আজ (৫ নভেম্বর) বরিশালে এরপর আগামী ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় দফার কর্মসূচি শেষ হবে।
ফখরুল বলেন, আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরি ফায়দা আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।
বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়; খালেদা জিয়ার জন্য নয়; তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়। এ সময় খালেদা জিয়া বরিশালকে বিভাগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বরিশালে বিএনপির গণসমাবেশে বিভাগীয় শহরের সমাবেশের মতো বরিশালের সমাবেশেও মঞ্চে দুটি চেয়ার ফাঁকা রাখা হয়েছে। জনসমাবেশস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘণ্টা আগেই বেলা ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়ে যায়। সমাবেশের প্রধান অতিথি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুপুরের দিকে সমাবেশস্থলে আসেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বলেছি, আগামী নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে সরকার জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু আমাদের অবস্থান খুবই পরিষ্কার। হাসিনাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ এখন এই সরকারের কবল থেকে মুক্তি চায়। আমাদের অবস্থান পরিষ্কার- বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দিন, ফয়সালা হবে রাজপথে। প্রধানমন্ত্রী এখন দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন কেন? এমনকি কিছুদিন আগেও তারা (সরকার) সর্বত্র উন্নয়নের দাবি করেছেন। মানুষ আর এ ধরনের উন্নয়ন চায় না।
দেশকে বাঁচাতে সব ধরনের বিভেদকে কবর দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করব। আমরা জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন নই, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি। তিনি অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘দুঃশাসন ও অপকর্মের’ মাধ্যমে একেরপর এক দেশের সব অর্জন ধ্বংস করেছে। হামলা ও মামলা দায়ের ‘অবৈধ’ সরকারের অস্ত্র বলে অভিযোগ করে এই মির্জা ফখরুল বলেন, প্রথমে হামলা, পরে মামলা। দেশের অর্থনীতির করুণ চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, কোটি কোটি টাকা মালয়েশিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য দেশে পাচার করে দেশকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে।