Search
Close this search box.

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার- ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন তিনি।

২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাহপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ইপিজেডকে যুক্ত করবে। এটি নির্মাণে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ১০ হাজার ২২৬ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে চীনা এক্সিম ব্যাংক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একটা টাকাও অপচয় করে না, বরং সব টাকা জনগণের কল্যাণে খরচ করে ।

সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আজকাল বিরোধী দল থেকে প্রশ্ন করে রিজার্ভের টাকা গেলো কোথায়, সারাদেশে অপপ্রচার করে। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ ছিল ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা, এসময় রিজার্ভ ৫ বিলিয়নের মতো বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা সেই রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়নে পৌঁছাই।

তিনি আরও বলেন, এরমধ্যে করোনার আঘাত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা তৈরি হয়েছে। আমাদের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়েছে। মনে রাখতে হবে, আমরা করোনার ভ্যাকসিন কিনে এনেছি। বিনাপয়সায় টেস্ট করিয়েছি, টিকা দিয়েছে। কোনও উন্নত দেশও বিনা পয়সায় টেস্ট  করেনি, ভ্যাকসিনও দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, খাদ্যশস্য, জ্বালানি তেলসহ এখনও অনেক পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। যা কিছু আমদানি করতে হচ্ছে সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, রিজার্ভ যা খরচ করেছি জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে।

রিজার্ভের অর্থ থেকে বিমান কেনা হয়েছে, নদীতে ড্রেজিং করা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, অন্য দেশের ডলার আনলে সুদ দিতে হয়। নিজেদের দেশে বিনিয়োগ করলে দেশের টাকা দেশই থাকে। পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি।

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ফোন পেলাম। বললো, আপা আপনার জন্য ইলিশ পাঠিয়েছি। সাড়ে ৭টায় ম্যাসেজ পেলাম, সাড়ে ৯টায় ইলিশ চলে আসলো। এটা হলো সড়ক যোগাযোগটা সহজ হওয়া কারণে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি নিজেরা চুরি করে অর্থ সম্পদ বানিয়েছে। জিয়া মারা যাওয়ার সময় একটা সুটকেস ছাড়া কিছু রেখে যায়নি। পরে দেখি হাজার হাজার কোটি টাকা। মানি লন্ডারিং মামলায় তারেক রহমানের সাত বছরের সাজা হয়েছে, একারণে তাদের মুখে সমালোচনা মানায় না বলে এসময় তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৩ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বদলে গেছে। একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না আমরা বলেছি। যত টাকা, সব আমরা মানুষের কল্যাণে খরচ করছি। করোনায় সহায়তা দিয়েছি। প্রণোদনা দিয়েছি। মালিকদের হাতে না দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিকদের হাতে দিয়েছি। কৃষকদের ভর্তুকি দিচ্ছি। মানুষের কল্যাণই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছি।

আসন্ন বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের ফসল উৎপাদন করতে হবে, খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। প্রতিটি বক্তৃতায় একথা বলি। পৃথিবীর কোথাও দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশে যেন ধাক্কা না লাগে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছি চলাচল ও পরিবহন সহজ হয় যাতে। নৌ, সড়ক, আকাশপথ সহজ করেছি। এগুলো আকাশ থেকে পড়েনি। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে। করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক যে মন্দা দেখা দিয়েছে তার ধকল থেকে বাঁচতে সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে।

তিনি বলেন, সবাইকে একটু সাশ্রয়ী হতে হবে; সতর্ক ও মিতব্যয়ী হতে হবে। নিজেদের সঞ্চয় বাড়াতে হবে। তেল, গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করতে হবে। যেখানে খালি জমি আছে, যত বেশি পারবেন খাদ্য উৎপাদন করবেন। ফল, তরকারি, যেটাই পারেন, উৎপাদন করবেন। হাঁস-মুরগি, ছাগল-ভেড়া পালন করবেন। নিজেদের উপার্জন নিজেদের করার চেষ্টা করতে হবে। যাতে বিশ্বব্যাপী মন্দার ধাক্কা বাংলাদেশে বেশি ক্ষতি করতে না পারে। আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যের যে অভাব দেখা দিচ্ছে, সেই অভাব থেকে বাংলাদেশের মানুষ যেন মুক্ত থাকে।

সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের জন্য আমরা ২০২১ রূপকল্প ঘোষণা দিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করা। একই সাথে শত সেতু নির্মাণ করা এবং তার উদ্বোধন করা আশ্চর্যের বিষয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলাম বলেই আজ এটা সম্ভব হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে মোবাইল ফোন ছিল না, মোবাইল নেটওয়ার্কও ছিল না, আমরা সেটাও তৈরি করে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা সিলেট ও চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছি। এখন কক্সবাজার বিমানবন্দরের কাজ চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সমগ্র বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। করোনা ভাইরাস, তারপর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু আমাদের নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। এর মাঝে ১০০ সেতুর নির্মাণ করে কাজ  সম্পন্ন হয়েছে।

ডেঙ্গুর বিষয়ে সতর্ক থাকার নিদের্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চয়ই নিজেদের সতর্ক থাকতে হবে। মশারি টানিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কোথাও যেন পানি জমে না থাকে। মশার প্রজনন জায়গাগুলো ধ্বংস করে দেওয়া, নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরই করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যা করার আমরা তা করব। আপনাদের পাশে আমরা আছি। সারা বাংলাদেশের উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কাজ করে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া-বাইপাইল হয়ে নবীনগর মোড় এবং ইপিজেড হয়ে চন্দ্রা মোড় পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শীর্ষক এই প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার সঙ্গে ৩০টি জেলার সংযোগ স্থাপনকারী আব্দুল্লাহপুর-আশুলিয়া ও বাইপাইল-চন্দ্রা করিডোরে যানজট অনেকাংশে কমবে।

প্রকল্পের আওতায় সাভার ইপিজেড থেকে নবীনগর সড়কে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। চীনের সহায়তায় প্রকল্পটি পরিচালিত হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি গণভবন প্রান্তে সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। অনুষ্ঠানে এক্সপ্রেসওয়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অপরদিকে আশুলিয়া বাজারের কাছে প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড-৩ প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ, এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক লি ইউয়েন জিয়ান,  ভাইস চেয়ারম্যান জো জিং জিয়াং সিএমসি ও সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল বিজনেস সেন্টারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জো ইয়াং লিসহ কর্মকর্তারা।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ