স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামীকাল দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করছেন। যশোর থেকেই এ কর্মসূচি শুরু করছেন তিনি। করোনা পরবর্তী ঢাকার বাইরের প্রথম কোনো বৃহত্তম জনসভায় যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি দেশব্যাপী এক এক করে দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেবেন। ভাষণ দেবেন। সে কারণে যশোরের জনসভা ঐতিহাসিক হতে যাচ্ছে।
এই জনসভাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ও এর সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে সরব রয়েছেন।
যশোর ছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভাগীয় শহর খুলনাসহ বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর. ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইলের সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং এসব জেলার আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই জনসভাকে সফল করতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন।
স্মরণকালের বড় জনসমাবেশ ঘটাতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। একই স্টেডিয়ামে প্রায় ৫০ বছর পর জনসভায় ভাষণ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ জনসভা সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।
এ জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি চলছে স্থানীয় পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও জনসভা সফল করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নিয়মিত করছেন সভা-কর্মিসভা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় শোডাউন দিতে চায় ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের বিপরীতে জনসভাটি রীতিমতো মহাসমুদ্রে রূপ দিতে চায় আওয়ামী লীগ।
এই জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ হেলাল উদ্দিন দীর্ঘ সাত দিন যশোরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে কর্মিসভা, বর্ধিত সভা, পথসভা করে চলেছেন। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, শেখ সারহান নাসের তন্ময় এমপিসহ নেতারা কাজ করছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক কাজ করছেন। এছাড়াও ইতোমধ্যে যশোরে আছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে যশোর অবস্থান করছেন। তারাও শুধু যশোরই নয়, পার্শ্ববর্তী জেলা-উপজেলায় গণসংযোগ, কর্মিসভা করে বেড়াচ্ছেন। এতে আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। এদিকে যশোরের জনসভা সফল করতে মঙ্গলবার মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা করা হয়।
১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এই যশোরই দেশের মধ্যে প্রথম হানামুক্ত জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এই যশোরের মাটিতেই ৬ই ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দ প্রথম স্বাধীন দেশে জনসভা করেছিলেন। এসব কারণে যশোরের একটা আলাদা ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। সেই যশোর থেকেই প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশব্যাপী তার রাজনৈতিক কর্মসূচির সূচনা করবেন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩১শে ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ ময়দানে সর্বশেষ রাজনৈতিক ও নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত এসএসএফ’র সদস্যবৃন্দ জনসভাস্থলসহ আশপাশের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছে। জনসভাস্থল যশোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন দু’টি কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার সেন্টার ইতিমধ্যে পরিবর্তন করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভাকে কেন্দ্র করে গোটা অঞ্চলকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। জনতার ঢল সামাল দিতে ইতিমধ্যে স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের গ্যালারি ভেঙে রাজ্জাক কলেজের মাঠের সঙ্গে স্টেডিয়ামের মাঠকে একাকার করা হয়েছে। স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পার্শ্বে আমেনা গ্যালির কাছে করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ। নৌকার আদলে নির্মিত এই মঞ্চের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম পার্শ্বে জনতার বসার স্থান করা হয়েছে। সরকারি এম এম কলেজের আসাদ গেট সংলগ্ন স্টেডিয়ামের প্রধান ফটক দিয়ে জনসভা মঞ্চে প্রবেশ করবেন প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর। ইতিমধ্যে এসএসএফ প্রধানমন্ত্রীর প্রবেশ পথের দুই পার্শ্বের সব স্থাপনা বিশেষ করে দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
বিএনপির ধারাবাহিক সমাবেশের পালটা হিসাবে সারা দেশে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের মহাসমাবেশ ও আগারগাঁওয়ে দলের ঢাকা জেলা কমিটির সম্মেলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে বার্তা দিয়েছে। ঢাকার বাইরেও এমন সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের। তারই ধারাবাহিকতায় আজ যশোরের শামসুল হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড এবং ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারের শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই জেলা সফরের মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি দেখানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেন, এখন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ঢাকার বাইরে জনসভা এবং গণসমাবেশ করবেন। করোনার কারণে তিনি এতদিন সশরীরে যেতে পারেননি। রবিবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, খেলা হবে। খেলা মানে পালটাপালটি নয়। খেলা মানে মারামারি নয়। আগুন নিয়ে এলে, আগুন নিয়ে খেলতে চাইলে, খেলা হবে। আওয়ামী লীগ রাজপথে থাকবে। কেউ খেলতে চাইলে জবাব দেওয়া হবে। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোর ঈদগাহ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে চট্টগ্রামে ২০১৮ সালের ২১ মার্চ পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। আর ২০১৭ সালের ৬ মে কক্সবাজার সফর করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিন বছর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে রাজনীতি ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি পাল্টেছে। আর তাই শেখ হাসিনা বিভাগীয় রাজনৈতিক কর্মসূচীতেও যোগ দেয়া শুরু করছেন।