স্টাফ রিপোর্টার – চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আগামীকাল আওয়ামী লীগের জনসভা। জনসভায় ভাষন দেবেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা থেকে বহুল প্রতীক্ষিত কালুরঘাট সেতু ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ফোর লেন নির্মাণের ঘোষণা আসতে পারে। এক দশক পর এ জনসভার আয়োজন করা হচ্ছে। ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর একই মাঠে আবার ভাষণ দেবেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই এ জনসভা সফল করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জনসভা ঘিরে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরে ৩০ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে ৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। একইসাথে আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনও করবেন তিনি।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে তিনটি প্রকল্প। তা হল ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২ নং পোল্ডারের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলার ৬৪/১এ, ৬৪/১বি এবং ৬৪/১সি পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প (২য় সংশোধিত)।
প্রধানমন্ত্রী সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের লালদীঘি মাঠে নির্মিত ৬ দফা মঞ্চসহ চট্টগ্রামের ১৮টি স্কুল-কলেজ ভবনের উদ্বোধন করবেন। এছাড়াও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে আধুনিক জাতিসংঘ পার্ক এবং মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণসহ ৪টি প্রকল্পের। কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
কোতোয়ালী থানাধীন দারুল উলুম আলীয়া মাদ্রাসার একটি ৬ তলা ভবন এবং সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুলে একটি ৫ তলা ভবন ও একটি ৪ তলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণসহ ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীনে কোতোয়ালী থানাধীন গুল-এ জার বেগম সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবন, কুসুমকুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, মীরসরাই উপজেলার করেরহাট কে.এম. উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, পাঁচলাইশ থানাধীন বন গবেষণাগার উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ তলা ভবন, বোয়ালমারী উপজেলাধীন হাজী মোহাম্মদ জানে আলম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন, সন্দ্বীপের সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪ তলা ভবন এবং ডবলমুরিং থানাধীন সরকারি সিটি কলেজে ১০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করা হবে।
উদ্বোধন করা হবে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবন সমপ্রসারণ এবং খুলশী থানাধীন সিএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ভবনের সমপ্রসারণ কাজ। উদ্বোধন করা হবে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘দুইটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন (প্রতিটি ৫০০০ বিএইচপি/ ৭০ টন বোলার্ড পুল) টাগবোট সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প ও ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড এবং টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রী সেদিন একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধনের পাশাপাশি আনোয়ারায় বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির আধুনিকীকরণ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান স্থাপন প্রকল্প, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সন্দ্বীপ অংশে জেটিসহ আনুষাঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ, চট্টগ্রামস্থ বিপিসি ভবন নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।
চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেটি শেষ করে ওইদিন পলোগ্রাউন্ডে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দেবেন তিনি। পলোগ্রাউন্ডে জনসভায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস হয়ে জনসভায় আসতে পারেন। এটা বিবেচনা করে বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত সড়ক সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। আবার বিকল্প হিসেবে টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার হয়ে সেনানিবাস পর্যন্ত সড়কও দ্রুত সংস্কার করা হচ্ছে। টাইগারপাস থেকে লালখানবাজার পর্যন্ত অংশে পাইলিংয়ের কাজ বন্ধ রেখে সড়কে কার্পেটিং করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের চিত্র। পুরো নগরজুড়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে। কারণ, বহুদিন পর আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নগর ও উপজেলায় প্রস্তুতিমূলক কর্মযজ্ঞ চলছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী। সমাবেশ সফল করতে গত ১৫ দিন ধরে ব্যস্ত সময় পার করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, এই জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটবে। শহর ও জনসভাস্থল ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে সংস্কার হচ্ছে রাস্তা-ঘাট। বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লেখন, আলোকসজ্জা ও তোরণ নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে পুরোদমে। চলছে মাইকিংসহ প্রচার-প্রচারণাও। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উন্মুখ হয়ে আছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
জনসভাকে কেন্দ্র করে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। এর মধ্যে নগরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, জনসভা মঞ্চ ঘিরে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও পলোগ্রাউন্ড মাঠের চারপাশে ও ভেতরে টহল দিচ্ছেন গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।
চট্টগ্রামবাসী বলছেন, শেখ হাসিনার হাত ধরে চট্টগ্রাম বন্দর পেয়েছে নতুন রূপ, সংযুক্ত হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি, চালু হয়েছে সিটিএমএস, সংযোজিত হয়েছে নতুন নতুন ইয়ার্ড ও সার্ভিস জেটি, বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে বহুগুণ, বেড়েছে রাজস্ব অর্জনের পরিমাণ। নগরের পতেঙ্গা এলাকায় ৪টি জেটি নিয়ে চালু হতে যাচ্ছে পিসিটি। পতেঙ্গা, হালিশহর, কাট্টলি অংশের সমুদ্র পাড়ে তৈরি হচ্ছে জোয়ার ভাটার যে কোনও সময়েই মাদার ভেসেল বার্থিং করতে সক্ষমতা সম্পন্ন বে-টার্মিনাল।
এছাড়াও মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। বাঁশখালীর গন্ডামারা ও মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে বৃহৎ আকারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার এর সাথে সারা দেশের যোগাযোগ সহজতর করতে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে দুই টিউব বিশিষ্ট দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ সড়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। পতেঙ্গা হতে ফৌজদার হাট পর্যন্ত সমুদ্র তীর ধরে নির্মিত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সিটি আউটার রিং রোড। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরী, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন হচ্ছে। এছাড়াও যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এর ফলে চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়ন ও দিন বদলের নেতৃত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বরণ করতে এবং তাঁর মুখে আগামীর বার্তা শুনতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন চট্টগ্রামবাসী।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের ১০ বছর পর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড ময়দানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে মুক্তকণ্ঠে কথা বলবেন। তাই এই জনসভা সফল করে তোলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। তাই উৎসবমুখর পরিবেশে শুধু পলোগ্রাউন্ড ময়দান নয়, সারা চট্টগ্রাম নগরীকে জনসমুদ্রের জনতরঙ্গে উদ্বেলিত করে তুলতে হবে। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামের হাজার হাজার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলে আসবে। এতে সভাস্থল ছাপিয়ে আশপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে পরিণত হবে। পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনার জনসভার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানান দিতে হবে আওয়ামী লীগ অবিনশ্বর এবং অপরাজেয় সংঘশক্তি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসমাবেশের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সমাবেশে আগত লোকজনের সার্বিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বড় পর্দায় সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেখার ব্যবস্থা করা হবে। চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে এ অঞ্চলের সর্বস্তরের জনগণ প্রস্তুত রয়েছে।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছি। গত ১৫ দিন ধরে এই কর্মযজ্ঞ চলছে। জনসভাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামের জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। জনসভা উপলক্ষে নগরে নতুন সাজে সেজেছে। আমরা এখন প্রধানমন্ত্রীর আসার অপেক্ষায় রয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দিতে চট্টগ্রামে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী সমর্থকরা ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন।