রুহিয়া খানম- রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পরীক্ষামূলকভাবে গ্রিডে সরবরাহ হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঢাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে এখনও কেন্দ্রটি বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেনি। চলতি মাসের মধ্যেই কেন্দ্রটির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু না হওয়া পর্যন্ত এটিকে সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বলা যায় না। কারণ, এখনও পিডিবির এই বিদ্যুৎ কিনছে না। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। সব মিলিয়ে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০০ মেগাওয়াট সদ্য উদ্বোধন করা গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন দিয়ে ঢাকায় আনা হচ্ছে। তবে সবই পরীক্ষামূলক। সিওডি (বাণিজ্যিক উৎপাদনের দিনক্ষণ) না হলে আমরা বলতে পারি না জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এর আগে গত ১৫ আগস্ট কেন্দ্রটিতে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছিল। এরপর মাঝেমধ্যে অল্প অল্প করে বিদ্যুৎ গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে দিতে শুরু করে। সর্বশেষ গত ২৪ নভেম্বর রামপালের মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের থেকে ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইএফপিসিএল। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মাণাধীন কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ৬৬০ মেগাওয়াট।
কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের কাজও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী বছরের জুনে দ্বিতীয় ইউনিটে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। নবনির্মিত এই সঞ্চালন লাইনটির প্রথম সার্কিট এবং পরে দ্বিতীয় সার্কিটে বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু করা হয়। বর্তমানে ঢাকার উপকণ্ঠে আমিনবাজার গ্রিড উপকেন্দ্রে এই লাইনের মাধ্যমে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট লোড সরবরাহ করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে লোড বৃদ্ধি করা হবে বলে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ-পিজিসিবি জানায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে গোপালগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে ৪০০ কেভি ভোল্টেজ দিয়ে লাইনটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছিল। চালুর পর থেকে লাইনটি বিদ্যুতায়িত রয়েছে। সফলতার ধারাবাহিকতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করা হলো।
পিজিসিবির উপ ব্যবস্থাপক এ বি এম বদরুদ্দোজা খান জানান, লাইনটি আমিনবাজার থেকে মাওয়া ও গোপালগঞ্জ হয়ে মোংলা পর্যন্ত বিস্তৃত। গোপালগঞ্জে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হাব থেকে মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদী ক্রস করে আমিনবাজার অভিমুখে নির্মিত লাইনটি চালু এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ায় বৃহত্তর খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের সাথে বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের সংযোগ শক্তিশালী হয়েছে। লাইনটি পিজিসিবি’র অন্যান্য সঞ্চালন লাইনের মতোই “ব্যাক টু ব্যাক” পদ্ধতির। অর্থাৎ উভয়দিক থেকে চাহিদা ও প্রয়োজনের নিরিখে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে। এর ফলে চাহিদা থাকলে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। এমনকি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালু হলে এই লাইনের মাধ্যমে এখন পুরো বিদ্যুৎ গ্রিডে যুক্ত করা যাবে।
পিজিসিবি জানায়, গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার গ্রিড সাবস্টেশন পর্যন্ত লাইনটির দৈর্ঘ্য ৮২ দশমিক ৫ কিলোমিটার; যার মধ্যে পদ্মা নদীতে ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার রিভারক্রসিং রয়েছে। গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার লাইনটিতে মোট ২২৬টি টাওয়ার রয়েছে। তারমধ্যে খরস্রোতা পদ্মা পাড়ির জন্য নদীতে এবং নদীর দুই প্রান্ত মিলে মোট ১১টি সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে।