স্টাফ রিপোর্টার- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বাসিন্দাদের ট্যাক্স দিতে কর্পোরেশনের অফিসে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আকাশের যত তারা, সিটি করপোরেশনের তত ধারা। সব জায়গায় কিছু অসৎ ব্যক্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অসৎ ব্যক্তিরা আপনাদের এসব ধারা দেখাবে। সুতরাং আপনারা এসব ধারার মধ্যে যাবেন না। আপনারা অনলাইনে গিয়ে আপনাদের ট্যাক্স দেবেন। সিটি কর্পোরেশনে আপনাদের আসতে হবে না।
সোমবার রাজধানীর গুলশান-২-এ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই মাসে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্ক উদ্বোধন করতে পেরে ডিএনসিসি কৃতার্থ।
রাজধানী ঢাকা সকলের উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে, চার নেতার জীবনের বিনিময়ে যে দেশ আমরা পেয়েছি, সেই দেশকে কি সত্যি আমরা ভালোবাসি? এই দেশকে যদি আমরা সত্যি ভালোবাসতাম, তাহলে আজ খাল দখল হতো না, মাঠ দখল হতো না, রাস্তার মধ্যে আমরা ময়লা ফেলতাম না। আসুন সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ সবল আধুনিক ঢাকা গড়ি।
গুলশান, বননী, নিকেতন লেকে মাছ ছাড়তে না পারার আক্ষেপ করে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমাদের বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্যগুলো সরাসরি সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনে অথবা চোরাই পথে লেকে পড়ছে। এতে পানি দূষিত হচ্ছে।
যাদের এমন অবৈধ সংযোগ রয়েছে তাদের বাড়িতে আগামী ৪ জানুয়ারি অভিযান চালানো হবে বলে জানান আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে তালিকা তৈরি করেছি। যখন আমি আপনাদের এমন অবৈধ ব্ল্যাক ওয়াটার লাইন, অর্থাৎ পয়ঃবর্জ্য লাইন বন্ধ করে দেবো তখন পয়ঃবর্জ্য ব্যাক ফ্লো করে কিন্তু আপনাদের ঘরের উপরে উঠে যাবে। তখন কিন্তু আমার কাছে এসে কোনো লাভ হবে না। তাই এখনো সময় আছে, নিজেরা ব্যবস্থা নিন।
ঢাকা উত্তরের মেয়র বলেন, এলজিইডি মন্ত্রী আমাদের খাল দিয়েছেন, তার ফল আপনারা পেয়েছেন। আগে নৌ-বাহিনীর কার্যালয়ের সামনে, আগারগাঁওয়ে, মধুবাগে, মগবাজারে পানি জমে থাকতো। এখন কোথাও পানি জমে থাকে না। এলজিইডি মন্ত্রী সিটি কর্পোরেশনকে খাল দিয়ে যেমন ভুল করেননি, তেমনি রাজউকও ডিএনসিসিকে মাঠ দিয়ে ভুল করেনি। তার প্রমাণ আজকে আমরা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ আছে। কিন্তু স্কুল ছুটির পর মাঠে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। আমি অনুরোধ করবো, এই মাঠগুলো যদি সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা সেটার দেখভাল করে স্কুল ছুটির পরও এলাকাবাসীর জন্য খোলা রাখতে পারবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ও সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা প্রমুখ।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ স্মৃতি পার্কটি আগে গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক নামে পরিচিত ছিল। মহান স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পার্কটির নতুন নামকরণ করা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৮ একর জায়গার ওপর অবস্থিত পার্কটি নতুন করে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এতে লাগানো হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার দেশি গাছ। এছাড়া পার্কটিতে বাসিন্দাদের হাঁটার জন্য আধুনিক রাস্তা করা হয়েছে। আছে শিশু ও বড়দের খেলার জায়গা ও মাঠ, জিমনেসিয়াম, টয়লেট এবং রেইন ফরেস্ট। বাইরে থেকে যাতে পথচারীরা পার্কটির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন এজন্য নিচু করে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে।