Search
Close this search box.

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, ইনশাল্লাহ – প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, ইনশাল্লাহ - প্রধানমন্ত্রী

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস উপলক্ষে পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখুন ॥ জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে ॥ ২০০৯ সালে গণহত্যা দুর্ভাগ্যজনক ॥ জাতি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না ॥ এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে ॥ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে ॥ বিজিবি একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে

 

স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চেইন অব কমান্ড বজায় রাখুন। ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দিবস’ ছিল মঙ্গলবার। দিবস উপলক্ষে সকালে রাজধানীর পিলখানার বিজিবি সদর দপ্তরের অভ্যন্তরে বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিজিবি সদস্যদের প্রতি তিনি আহবানও জানান। সঙ্গে বলেন, জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, ইনশাল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আধাসামরিক বাহিনীতে গণহত্যাকে দুর্ভাগ্যজনক বলে অভিহিত করে বলেছেন, জাতি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার গঠনের মাত্র ৫২ দিনের মধ্যে ২০০৯ সালে (তৎকালীন বিডিআরে) একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছিল। পুরো জাতি এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর পিলখানা সদর দপ্তরে সংঘটিত বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রী ওই ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শেখ হাসিনা বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা ও চেইন অব কমান্ড বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যে কোনো সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা জিনিস মনে রাখবেন, কখনই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন না এবং সেই অনুযায়ী আপনার দায়িত্ব পালন করবেন। চেইন অব কমান্ড বজায় রাখুন।
শৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার জন্য তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশে ১৯৭৪ সালের ৫ই ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-এর সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন : ঈমানের সাথে কাজ কর; সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবাস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আমাদের, দেশ যত উন্নত হবে আপনাদের পরিবারই ভাল থাকবে, সুস্থ থাকবে। উন্নত জীবন পাবে, শিক্ষা-দীক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানসহ সবধরণের সুযোগ পাবে। সে কথা সবসময় মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বর্ডার গার্ড আইন ২০১০ পাশের পর এই বাহিনীকে আমরা আধূনিক ও যুগোপযোগী করে গঠন করেছি। আমার বিশ^াস আধুনিক সীমান্ত রক্ষী বাহিনী হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্য অর্জনে।
একটি পেশাগত ও সুশৃঙ্খল বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, যেকোন পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুশৃঙ্খল ও দক্ষ বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা যেভাবে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন আজকে আওয়ামী লীগ সরকার সেই পদক্ষেপই নিয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনামূল্যে ঘর এবং জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে একটি মানুষও ভুমিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, ইনশাল্লাহ। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটা মানুষের জন্য একটা ঠিকানা গড়ে দেয়ার পাশাপাশি সকলের হাতে আজকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সার্ভিস, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন, ফ্রিল্যান্সিং, তরুণ প্রজন্মের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সর্বক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যে দেশকে জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালিনই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। এটা আমাদের ধরে রেখে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও কোভিড-১৯ মহামারির বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও একে কেন্দ্র করে নিষেধাঞ্জা ও পাল্টা নিষেধাঞ্জার ফলে সারাবিশে^ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে যাতে এই মন্দা না আসে সেজন্য আমাদেরকেই তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কারো কাছে হাত না পেতে নিজেদের খাদ্য উৎপাদন করে আমরা নিজেরা নিজেদের মতই চলবো, মাথা উঁচু করে চলবো।

শেখ হাসিনা বলেন, এই কারণেই আমি আহবান করেছি এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, প্রতিটি ইঞ্চিতে যে যা পারেন তা উৎপাদন করবেন। প্রতিটি বিওপিতেই আমাদের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা কিছু না কিছু উৎপাদন করছেন বা পশু পাখি পালন করায় তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান।

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরনের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ই-ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করবে।

দেশকে আরো এগিয়ে নিতে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান অর্থাৎ এই ভূখন্ড এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পেতে পারে সেই পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। সে জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজও আমরা শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১৪ হাজার ৫টি বিভিন্ন পিলারে একসময় পাকিস্তানের সংক্ষিপ্ত পাক লেখা ছিল যেটাকে বিজিবি পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ও বিডি নাম লিখেছে। এটা কেন দীর্ঘদিন লাগল তা আমি জানি না তবে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু এখন সেটা আমাদের সুনির্দিষ্টভাবে করা হয়েছে।

বিজিবিকে বিশ্বমানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে আমাদের সংবিধান সংশোধন করে সীমানা ঠিক করে দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো তখনও ভারতের সঙ্গে আমাদের ছিটমহল বিনিময় হয়নি। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যারা একের পর এক ক্ষমতায় এসেছিল প্রায় ২১ বছর তারা কখনও আমাদের এই সীমান্ত রেখা সুনির্দিষ্ট করার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর আমরা এই উদ্যোগ নিই। দ্বিতীয়বার আমরা ক্ষমতায় আসলে আমাদের উদ্যোগে ভারতের পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে আইন পাস করে সীমান্তরেখা সুনিদির্ষ্ট করা হয়েছে। এটা আমাদের বিরাট অর্জন।

বিজিবির উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি চোরাচালান রোধ; মাদক, নারী ও শিশু পাচার আন্তর্জাতিক অপরাধ দমনসহ সীমান্তবর্তী জনগণের জানমাল রক্ষা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা এসব দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন। আমরা অত্যন্ত উৎসবমুখরভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছি যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে আমাদের বর্ডার গার্ড অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সব ধরনের দেখাশোনা, আশ্রয়, রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম ও বিভিন্ন কাজে আমাদের বর্ডার গার্ড দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিচ্ছিদ্র নজরদারি ও অন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ মোকাবিলা ও ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিলেন্স ও ট্যাক্টিক্যাল স্মার্ট সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ও দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্বে পার্বত্য সীমান্ত এলাকায় ৩১৭ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে চারটি ব্যাটালিয়ান ও সুন্দরবন এলাকায় দুটি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজন করা হয়েছে। এতে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে চারশ দুই সীমান্ত নজরদারিতে আনা সম্ভব হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলায় জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে এখন সক্ষম তারা।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, একটা স্বাধীন দেশ যেটা পাকিস্তানের প্রদেশ ছিল, একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সেই দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতা বেঁচে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারত। আমাদের ভাগ্যে তা জোটেনি, এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।

তিনি বলেন, ২২৭ বছরের ঐতিহ্যবাহী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ বিজিবিকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক, দক্ষ ও শক্তিশালী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’-এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনী পুনর্বিন্যাস করে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫টি রিজিয়নসহ নতুন নতুন সেক্টর ও ইউনিট সৃজন করে কমান্ড স্তরে ভারসাম্য আনাসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯২২ নারী সৈনিকসহ সৈনিক ও অসামরিক পদে ৩৫ হাজারের অধিক জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বাহিনীর জনবল আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ ৯০ থেকে ৯৫ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিকে একটি যুগোপযোগী ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বতন্ত্র এয়ার উইং সৃজন করে এরই মধ্যে অত্যাধুনিক এমআই-১৭১-ই প্রযুক্তির হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। দেশের সীমান্ত এলাকায় নিশ্ছিদ্র নজরদারি ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে ‘স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্যাল বর্ডার রেসপন্স সিস্টেম’ স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে অত্যাধুনিক আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি), রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল, অল ট্যারেইন ভেহিক্যাল (এটিভি), আধুনিক ও যুগোপযোগী এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সিরিজের হাইস্পিড বোট এবং এয়ার বোট সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মোদ্দীপনা বহুগুণ বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং দুর্গম পার্বত্য এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সর্বমোট ১,০৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্বে ৩১৭ কিলোমিটার সীমান্ত সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি পার্বত্য অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিজিবির আভিযানিক কর্মকাণ্ড সহজতর হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি সৃজনের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে অধিকাংশ সীমান্ত এরইমধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও সীমান্তে বিজিবির সক্ষমতা বৃদ্ধি, অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন এবং নজরদারি জোরদার করার জন্য বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকা কমানোর লক্ষ্যে ২৪২টি নতুন বিওপি সৃজন এবং সীমান্ত হতে অধিক দূরত্বে স্থাপিত ১২৬টি বিওপি সীমান্তের সন্নিকটে স্থানান্তরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজিবি সদস্যদের নতুন র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি, সীমান্ত ভাতা বৃদ্ধি, জুনিয়র কর্মকর্তা ও হাবিলদার পদবির সদস্যদের বেতন স্কেল উচ্চ ধাপে উন্নীতকরণ, অগ্রিম বেতনসহ বাৎসরিক ২ মাসের ছুটি প্রদান, পারিবারিক রেশন ও ৩ বছরের নিচে সন্তানদের পূর্ণস্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদমূল্যে রেশন প্রদান এবং জ্বালানি, মসলা, চুলকাটা ও পোশাক ধোলাই ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পূর্বের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য বর্ডার গার্ড হাসপাতাল, ঢাকায় ক্যাথ ল্যাব, সিসিইউ, আরটিপিসিআর ল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিন স্থাপনসহ আরও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবি হাসপাতালসমূহকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) আধুনিক ও যুগোপযোগী করে পুনর্গঠন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, বিজিবি একদিন বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
পুরো প্যারেড গ্রাউন্ড ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী। উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজিবি ডিজিসহ বিজিবি কর্মকর্তা ও উপস্থিত অতিথিদের অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে শুরু হয় বিজিবির কুচকাওয়াজ। বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজিবি সদস্যদের পদক প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ইপিআরের ৩য় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণের কিয়দংশ ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ