Search
Close this search box.

এই বিজয়ের মাসে আমি জনগণের জন্য বিজয়ের উপহার হিসেবে একশোটা সড়ক মহাসড়কে রূপান্তর করে দিলাম – প্রধানমন্ত্রী

এই বিজয়ের মাসে আমি জনগণের জন্য বিজয়ের উপহার হিসেবে একশোটা সড়ক মহাসড়কে রূপান্তর করে দিলাম - প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে কী করেছে? দেশকে কী দিয়েছে? কতটুকু উন্নয়ন করেছে? একটু বিবেচনা করুন ॥ আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ॥ ক্ষমতায় আসলে জনগণের কল্যাণে কাজ করে এবং কাজ করে যাব ॥ ১০০ সেতু একইদিনে উদ্বোধন, ১০০টি মহাসড়ক একইদিনে উদ্বোধন, এটা অতীতে কেউ কখনো করতে পেরেছে? পারেনি ॥ পারে আওয়ামী লীগ – এটাই প্রমাণিত সত্য ॥ আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে ॥ আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবন যাপন করতে পারে ॥ আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব ॥ যারা জয় বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের কোনো উন্নতিও চায় না ॥ স্বাধীন বাংলাদেশ তারা চায়নি ॥ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য ॥

মিথুন আশরাফ – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই বিজয়ের মাসে আমি জনগণের জন্য, বিজয়ের উপহার হিসেবে, এই একশোটা সড়ক মহাসড়কে রূপান্তর করে দিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন করেছেন। দেশের ৫০টি জেলায় ১০০টি জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২ হাজার ২১ কিলোমিটার। বুধবার সকাল ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মহাসড়ক উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে, গত ৭ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ২৫টি জেলায় নবনির্মিত ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দুই হাজার ২১ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ২০৬ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৬২১ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১১৯৩ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক। এসব মহাসড়ক নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে প্রতিটি স্তরে এসব মহাসড়কের কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রকৌশলী থেকে শুরু করে শ্রমিক, স্থানীয় জনগণ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি – সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিবসহ যারা সম্পৃক্ত, তাদের সবাইকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই যে এত দ্রুত এই কাজগুলো তারা সম্পন্ন করতে পেরেছেন।

একশটি মহাসড়কের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৬৫৩ দশমিক ৬৬ কিলোমিটারের ৩২টি; ময়মনসিংহে ১৪২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটারের ৬টি; চট্টগ্রামে ২৫৮ দশমিক ৯০ কিলোমিটারের ১৫টি; সিলেটে ১০৬ দশমিক ১৮ কিলোমিটারের ৪টি; খুলনায় ৩৫২ দশমিক ২৬ কিলোমিটারের ১৬টি; রাজশাহীতে ১৯৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটারের ৮টি; রংপুরে ২০৩ দশমিক ৯৫ কিলোমিটারের ১৫টি এবং বরিশাল বিভাগে ১০৭ দশমিক ২৬ কিলোমিটারের চারটি মহাসড়ক রয়েছে। এর আগে গত ৭ নভেম্বর গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ২৫টি জেলায় নবনির্মিত ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিবেচনা করুন আ.লীগ দেশ ধ্বংস করেছে নাকি উন্নয়ন। সরকারে এসে আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করেছে এ ধরনের কথা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দিয়ে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে কী করেছে? দেশকে কী দিয়েছে? কতটুকু উন্নয়ন করেছে? একটু বিবেচনা করুন।

টানা তিনবারের সরকার প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শুনতে হয় যে আওয়ামী লীগ সরকার দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে! এর আগে ১০০টি সেতু আমরা উদ্বোধন করলাম, আর এখন ১০০টি মহাসড়ক নির্মাণ বা উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করলাম। আমি জানি না বাংলাদেশের মানুষ – এরপর যারা বলে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই। তো দেশের মানুষ সেটা বিশ্বাস করবে কি না সেটাই আমার প্রশ্ন?

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন ক্ষমতায় আসলে জনগণের কল্যাণে কাজ করে এবং কাজ করে যাব। যারা বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি, ধ্বংস করেছে তাদেরকে আজকে আমি প্রশ্ন করি – ১০০ সেতু একইদিনে উদ্বোধন, ১০০টি মহাসড়ক একইদিনে উদ্বোধন এটা অতীতে কেউ কখনো করতে পেরেছে? পারেনি। পারে আওয়ামী লীগ- এটাই প্রমাণিত সত্য।

আ.লীগ সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুবিধাগুলো যতটুকু আপনারা পেয়েছেন – (যখন) ৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়। আর পেয়েছেন স্বাধীনতার পর সেই বাহাত্তর সাল থেকে ৭৫ জাতির পিতা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ সড়ক সেতু মেরামত এবং নির্মাণ করেছেন। এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল ২১ বছর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮; অর্থাৎ ২৯ বছর বা ৩০ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশের জন্য কি করেছে বা কতটুকু উন্নতি করেছে? আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকতে কি করেছে? আমি আশা করি দেশবাসী অন্তত সেটা একটু বিবেচনা করে দেখবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, আমরা প্রাইভেট টেলিভিশন দিয়েছি, রেডিও দিয়েছি, অনলাইন সব ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখন যোগাযোগ, (সেখানে) সত্য মিথ্যা অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, আমরা বিশ্বাস করি গণমানুষ যেন ভালো জীবন যাপন করতে পারে।

তিনি বলেন, কাজেই সেই কথাটা সকলকে স্মরণ রাখতে হবে। যে কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল, আর কখন দেশের মানুষ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ দুর্নীতির কবলে পড়ে মানুষের জীবনমান সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিল। সেটা স্মরণ করে সেই তুলনা করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কি চান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ দেশের মানুষের শান্তি উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই এবং সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বারবার ঝড় ঝাপটা এসেছে সেটা মোকাবিলা করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশি হিসেবে গড়ে তুলব। এই স্মার্ট বাংলাদেশে প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করবে এবং সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে, সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি এবং সেটা আমরা কিছু বাস্তবায়নও করছি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, মানিলন্ডারিং, অগ্নি সন্ত্রাসকারী অথবা গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা, এই ধরনের মানসিকতা সম্পন্ন কেউ যেন, এ দেশে বা আমাদের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে নাই বা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। যারা জয় বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এদেশের কোনো উন্নতিও চায় না। স্বাধীন বাংলাদেশ তারা চায়নি সে কারণেই চায় না।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। ই-গভর্ন্যান্স, ই-এডুকেশন অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এভাবেই আমরা পরিকল্পনা করেছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে সড়ক ব্যবহারের নিয়ম-কানুনে শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাধারণ পথচারী, যাত্রী এবং ড্রাইভার ও হেলপার যদি সড়ক ব্যবহারের নিয়ম জানে এবং যথাযথভাবে মানে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে।

দেশের জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভার গাড়ি থামান না। ভয় পান। কারণ, সঙ্গে সঙ্গে জনগণ গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিতকে সাহায্য না করে ড্রাইভারকে মারধর শুরু করেন। অনেক সময় গণপিটুনিতে ড্রাইভার মারা যান। এ কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছে করে মানুষ মারে না। দুর্ঘটনা ড্রাইভারের কারণে হতে পারে, পথচারীর কারণেও হতে পারে। তবে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি অপরাধ করে, আপনারা ধরেন, পুলিশে/থানায় দিয়ে দেন। বিচার হবে। এজন্য আইনও করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, অনেক সময় গাড়ি থামালে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচেও যেতে পারে। কিন্তু ড্রাইভারের না থামানোর কারণে মরে যায়। এজন্য ড্রাইভারদের ভীতি কমানোর দায়িত্ব জনগণের। দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে মেরে সমাধান হয় না। বরং আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দিন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে সচেতন হতে হবে। পৃথিবীর কোথাও নেই, দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে পেটায়।

সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপকভাবে চালক ও সহযোগীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমরা প্রায় পুরো দেশেই প্রশিক্ষণকেন্দ্র করে দিয়েছি। একই সঙ্গে সড়কপথে চলতে নিয়ম মানার শিক্ষা স্কুল জীবন থেকেই দিতে হবে। রাস্তা ব্যবহারের নিয়মকানুনেরও ট্রেনিং দেওয়া দরকার। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দরকার হলে রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে প্রদর্শন করতে হবে। তাছাড়া টেলিভিশনসহ নানা মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি চালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। কিছু কিছু করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময় ড্রাইভ করার পর রেস্ট নিতে হবে বা ভিন্নজনকে দিয়ে ড্রাইভ করাতে হবে। ড্রাইভারদের খাবার, বিশ্রামসহ সব বিষয়ে মালিকদের যত্নবান হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। অনেক সেতু করেছি। ড্রেজিং করে নদীপথও করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, প্রযুক্তি জানবে ও সুফল ভোগ করবে। এ লক্ষ্যে আমরা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলকে রক্ষা করে উন্নত জীবন দিতে চাই। এজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ তৈরি করেছি। যদি দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল সরকার ক্ষমতায় থাকে তাহলে এটা বাস্তবায়ন হতে থাকবে। যে সরকার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবে, নিজের ভাগ্য না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ