স্টাফ রিপোর্টার- বিএনপি নির্বাচনে না এলে অপূর্ণতা থেকে যাবে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারও আন্তরিক।
বরিশালের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সিইসি।
সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো দলকে আমরা জোর করে নির্বাচনে আনতে পারবো না। বিএনপিকে আমরা সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছিলাম, তারা আসেননি। আমাদের উপর অনাস্থা রয়েছে বিএনপির, সরকারের উপরও অনাস্থা রয়েছে। বিএনপির যে নির্বাচনে আসা প্রয়োজন সেটা কিন্তু সরকারও বলছে। সরকার অনুধাবন করেছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে বিএনপির আসা জরুরি। আমরা চাই নির্বাচনে সকলে অংশগ্রহণ করুক।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘ভারত আর আমাদের দেশের ইভিএম মেশিন এক নয়। ভারতের মেশিনে আঙুলের ছাপের প্রয়োজন হয় না। এতে একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারে। তবে আমাদের দেশের মেশিনে সেই সুযোগ নেই। ইভিএম ভালো না খারাপ সেটা আমি বলবো না। আমাদের ইভিএমে ভোট না দিয়ে ফিরে গেছে এমন কোনো ঘটনা নেই। এমন হতে পারে যে আঙুলের ছাপ না মেলায় দেরি হচ্ছে বা মেশিন স্লো কাজ করছে। এখন যে ইভিএম আছে তাতে ৫০/৬০টি আসনে দিতে পারি। আমাদের সামর্থ্য আছে ৩০০ আসনে ব্যালটে ভোট গ্রহণের। সরকার ইভিএম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, এখন পর্যন্ত ইভিএম নিয়ে আমরা তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘কিছু সংকট থাকবেই, আবার কোনো সংকট থাকবে না যদি আমরা ভোটারদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি।’
এর আগে মতবিনিময় সভায় বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাচন কমিশনের আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সায়েম, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সঞ্জয় কুমার কুন্ডু, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা।
এদিকে বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করায় শূন্য হওয়া আসনগুলোতে উপনির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপর এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আসনগুলোতে উপনির্বাচন উপলক্ষে ভোটার এলাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি ছাড়া বদলি করা যাবে না।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির এই নির্দেশনা এরই মধ্যে ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান রিটার্নিং কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনার অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৪৪ই অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পূর্বানুমতি ছাড়া ৪৪ই অনুচ্ছেদে উল্লিখিত কর্মকর্তাদের স্ব-স্ব কর্মস্থল হতে বদলি করা যাবে না।
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর ৫(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের অবশ্যকর্তব্য। নির্বাচনী সময়সূচি জারির পর নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ১৩ নং আইন)-এর ৪(৩) ধারা অনুসারে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা/কর্মচারী স্বীয় চাকরির অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রেষণে নিয়োজিত আছেন বলে বিবেচিত হবেন।
ওই আইনের ৪(২) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কর্মকর্তা নিযুক্ত হলে তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বাধা দিতে বা বিরত রাখতে পারবেন না।