মিথুন আশরাফ – সরকারের ধারাবহিকতার কারণেই দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ জীবন থাকতে নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশের স্বার্থ কখনো কোথাও বিলিয়ে দেয়া হবে না। শনিবার দুপুরে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন তিনি। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’- এই স্লোগানে আয়োজিত হয় এবারের কাউন্সিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে চেষ্টা করা হয়েছিল। ৭৫ এর পর জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তাকে মেনে নেয় না। আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছি। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন হয়েছিল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু কারো ভোট চুরি করলে বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয় না। এ দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। গণঅভ্যুত্থান, আন্দোলন হয়েছিল। খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল। বাংলার জনগণ তাকে বাধ্য করেছিল। এর পরে ১২ জুন যে নির্বাচন হয়েছিল, সেই নির্বাচনে আমরা সরকার গঠন করি।
শেখ হাসিনা বলেন, একাশি (১৯৮১) সালে আমাকে যখন সভাপতি করা হলো তখন আমি রেহানার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিই, দেশে আমাকে আসতেই হবে। তখন ছেলে-মেয়েকে রেহানার কাছে রেখে দেশে ফিরে আসি। আমার থাকার জায়গা ছিল না, কোথায় উঠব, কোথায় থাকব কিছুই জানি না। দেশে ফিরে এসেছি, আব্বা একটা কথা বলত, আমার দেশের গরিব দুঃখী মানুষের ভাগ্য গড়তে হবে।
গরিব দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, গরিব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে আমি দেশে ফিরে আসি। এরপর আন্দোলন সংগ্রাম করে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের ক্ষমতায় আসার কথা তুলে ধরেন। এই জন্য নেতা কর্মী ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে সরকারে না আসতে পারে, অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ কারও হাতে তুলে দেবো না, এটাই ছিল আমার প্রতিজ্ঞা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ। তিনি দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। দুর্ভাগ্য তিনি সেটা পারেননি। আমরা সেটা করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করে দিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশটাকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিলাম, বিদ্যুতের উৎপাদন-স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি করেছিলাম, রাস্তাঘাট-যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অনেক কাজ করে বাংলাদেশকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১-এ আমরা সরকারে আসতে পারিনি। কেন পারিনি অনেকবার বলেছি, আর বলতে চাই না; বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ আমার জীবন থাকতে নষ্ট হবে না, কারো হাতে তুলে দেবো না। আমার এই প্রতিজ্ঞাই ছিল। হয়তো সে কারণে আমরা আবার আসতে পারিনি। তাতে আমার কোনো আপসোস নেই। ২০০১-এ যারা ক্ষমতায় এসেছিল…হত্যা, খুন, লুটপাট, দুর্নীতি, বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা, এ রকম অনেক খেলাই এ দেশের মানুষ দেখেছে। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা করে নির্বাচনে কারচুপি করে যে চক্রান্ত করেছিল সেই চক্রান্ত এ দেশের জনগণ সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দিয়ে…তার পরে অবশ্য ইমার্জেন্সি আসে, গ্রেপ্তার করে। ২০০৮-এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মহাজোট করে আমরা জয় লাভ করি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০০৮-এ জয় লাভ করে ২০০৯-এ সরকার গঠন করেছি, আজকে ২০২২। পরপর ৩ বার ক্ষমতায়। আর ক্ষমতায় আছি বলেই আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। যেখানে বাংলাদেশের বাজেট হতো মাত্র ৬২ হাজার কোটি টাকার। এই ২০২২-২৩ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ বাজেট দিয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
বঙ্গবন্ধুর সন্তান দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে ক্ষমতায় আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, দুর্নীতি করে টাকা আয় করতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসেনি। আওয়ামী লীগের হাতেই দেশের উন্নয়ন এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালে দুর্নীতি ও লোটপাটতন্ত্র কায়েম করেছিল। মানুষের ভোটের অধিকার কেঁড়ে নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে উন্নত সমৃদ্ধ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তাবায়ন করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থেকে বিদ্যুতের কথা বলে খাম্বা দিয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ সরকার দেশের প্রতিটি ঘরে আলো পৌঁছে দিয়েছে। বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের বর্তমান মাথা পিছু আয় ২৮২৪ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করছে তখন দেশ উন্নত মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় যেতে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল খালেদা জিয়া। বর্তমানে ভোটার আইডি স্মার্ট করা হয়েছে। ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ।
শনিবার সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল চত্বর, রমনা কালীমন্দির গেট ও টিএসসি এবং চারুকলার বিপরীত গেট দিয়ে মিছিল নিয়ে সম্মেলন স্থলে ঢুকতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন রূপ নেয় জনসমুদ্রে। সম্মেলন স্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়।
আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মৎস্যজীবী লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, তাঁতি লীগ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সারাদেশের সাংগঠনিক জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নামে।
২০১৯ সালে সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০ ও ২১ ডিসেম্বর। সেই সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। এ দলের জন্মের পর থেকে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা অর্জনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দলটির নাম। ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে সকল ধর্ম, বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ যায়। এরপর ১৯৭১ সালে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।