স্টাফ রিপোর্টার – আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি গণমিছিলের নামে সহিংসতা করবে আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে? বিএনপি তারা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করবে আর আওয়ামী লীগ চুপ থাকবে এটা হতে পারে না।’ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ওবায়দুল কাদের এমন কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সতর্ক পাহারায় থাকব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির পূর্বঘোষিত ৩০ ডিসেম্বরের গণমিছিলের দিন আওয়ামী লীগ সতর্ক পাহারায় থাকবে। ১০ ডিসেম্বরের মতো আমরা সারা দেশে সতর্ক পাহারায় থাকব। ওইদিন যেমন ছিলাম একই অবস্থানে থাকব।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য সদস্যদের নাম কোনদিন ঘোষণা করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রংপুর এরশাদ সাহেবের প্রভাবিত এলাকা। আমাদের প্রার্থীর হেরে যাওয়ার ঘটনায় দুর্বলতা খুঁজতে সাংগঠনিক পদক্ষেপ নেয়া হবে।
রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচন আসল খেলা নয়; আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খেলা হবে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে বেশি কিছুদিন ধরেই খেলছেন ওবায়দুল কাদের। রংপুরের হারের পর সেই স্লোগান নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তেরে তিনি বলেন, ‘খেলা হবে তো এখানে নয়, খেলা হবে নির্বাচনে, আসল, জেনারেল ইলেকশনে। এগুলো কি খেলা? এগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচন।’
রসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ভরাডুবির বিষয়ে কাদের বলেন, ‘এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। সেখানে নানা বিষয় থাকে। সেখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এগিয়েও ছিল। আমাদের ভেতরে সমস্যাও ছিল। আমরা কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাইনি, আমরা জানি জাতীয় পার্টি এগিয়ে ছিল। আমরা এগিয়ে যাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা করিনি, বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। আমরা রংপুরের বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক সপ্তাহের মধ্যে বড় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছি রংপুরের ক্ষেত্রে।’
তিনি আরও বলেন, খেলা হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। যা বলেছি গত ১১ বছরে তাই করেছি। রংপুর এরশাদ সাহেবের প্রভাবিত এলাকা। মোস্তফা ব্যক্তিগতভাবে পপুলার (জনপ্রিয়)। আমরা কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। দুর্বলতা যেটি সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রার্থী বাছাইয়ে সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল, আমরা জানি দুর্বল, তারপরও নারী প্রার্থী দিয়েছি। হেরে যাওয়ার রিস্ক জেনেও অনেককে মনোনয়ন দিয়েছি। একটা নারীকে দিয়ে দেখলাম রি অ্যাকশন কী, আওয়ামী লীগে এগুচ্ছে। নারীদের ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছি, যেকোনো নির্বাচনে তাদের এগিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জ। অনেক পুরুষ নেতারা তাদের মেনে নিতে চায় না। সে কারণে রংপুরে অনেকে এগিয়ে আসেনি।’
নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রার্থী নির্বাচনে ভুল হয়নি, এ নারীর কোনো বদনাম নেই, তিনি প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী। মানুষ হিসেবে তার সুনাম অনেক। তাকে দিলে যেন ভোট দেয় সেই মানসিকতা তৈরি করতে এমন সিদ্ধান্ত। দলে ও বাইরে একী সুর! তাহলে কি নারীরা বের হবে না!’
তিনি বলেন, ‘রংপুরের নির্বাচনে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। আমরা পিছিয়ে ছিলাম বলে কোনো হস্তক্ষেপ করি নাই। তবে যারা দলের পক্ষে কাজ করে নাই তাদের বিরুদ্ধে খুব শিগগিরই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মঙ্গলবার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বিপুল ভোটে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিরুজ্জামান প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে থাকা কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী মো. লতিফুর রহমান হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নৌকা মার্কায় ২২ হাজার ৩০৬ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।