স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর প্রথমবারের মত শুক্রবার দুই দিনের সফরে খুলনায় যাবেন। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন। শুক্র ও শনিবার তিনি সফরে থাকবেন। সেখানে সফরে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি ২৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
শনিবার টুঙ্গিপাড়ায় উপস্থিত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮টি প্রকল্পের মধ্যে ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বাকি ৯টি প্রকল্প শিক্ষা ও গণপূর্ত বিভাগ এবং টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনের ফলে জেলার আর্থ সামাজিক ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
ব্যক্তিগত সফরে শুক্রবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে তাঁর সড়কপথে খুলনায় যাওয়ার কথা রয়েছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পার হয়ে আড়ংঘাটা বাইপাস ধরে দিঘলিয়া ঘাটে পৌঁছাবেন। ঘাট পার হয়ে তিনি দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে কেনা পাট গোডাউন পরিদর্শন করবেন। এর আগে, সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩ মার্চ খুলনায় আসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ সফর রাষ্ট্রীয় নয়। সে কারণে তার সঙ্গে আমাদের দলের কোনো নেতাকর্মীর সাক্ষাৎ হবে কিনা এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় একটি জমি কেনা ছিল। জমির ওপর পাট গোডাউন ছিল। নেত্রী দীর্ঘদিন সেখানে আসেননি। আমার যতদূর মনে পড়ে ১৯৮২ সালে একবার এসেছিলেন। আওয়ামী লীগের দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা দেখা করতে পারবেন।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিনী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক (৪ বিঘা) জমিতে পাট গোডাউন ও এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের এ জমি দেখাশোনা করতেন।
বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী এ জমির মালিক হলেও জমিটির কথা জানতেন না তিনি। ২০০৭ সালে তিনি তার ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে এ জমির খোঁজ পান। বঙ্গবন্ধুর পুরাতন সেই পাট গোডাউন ভেঙে সেখানে আধুনিক গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে রেস্ট হাউজ। গোডাউন সংলগ্ন পাকা রাস্তার নামকরণ হয়েছে শেখ রাসেলের নামে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ১০ বারের মতো দলের সভাপতি নির্বাচিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবার আবার দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমবার নিজ জান্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী।
উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হলো, মধুমতি নদীতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প, টুঙ্গিপাড়া লঞ্চঘাটে বাঘিয়ার নদীর পাড়ে বোট ল্যান্ডিং র্যাম্প, পাটগাতি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পাটগাতি শ্মশান উন্নয়ন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, কুশলী জাট জিসি-ধারাবাশাইল ভায়া মিত্রডাঙ্গা-সোনাখালী সড়কে ১৩০৪০ মিটার চেইনেজে তারাইল খালের উপর ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, তারাইল জসি-টুঙ্গিপাড়া হেড কোয়ার্টার ভায়া নারায়ণখালী সড়ক ইউনি ব্লক দ্বারা উন্নয়ন চেইনেজে ০০-৪৩৪০ মিটার, বান্ধাবাড়ী ইউপিসি-জহরেরকান্দি বাজার সড়কে ৫ মিটার চেইনেজে ৩০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, হরিণাহাটি বাজার-রাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ১০ মিটার চেইনেজে ৬০ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, পিঞ্জুরী-সোনাখালি ভায়া চেয়ারম্যান বাজার সড়কে ১০১০০ মিটার চেইনেজে ৪২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, পিঞ্জুরী-সোনাখালি ভায়া চেয়ারম্যান বাজার সড়কে ৮৫৫০ মিটার চেইনেজে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, কলাবাড়ী বাসস্ট্যান্ড-রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়-কালিগঞ্জ বাজার সড়কে ৫০০ মিটার চেইনেজে ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মাঝবাড়ী আরএইডি-রাধাগঞ্জ বাজার সড়কে ২১০০ মিটার চেইনেজে ২৪ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, কোটালীপাড়া পারকোনা শ্রী শ্রী গনেশ পাগল মন্দির, মাঝবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ত্রিপল্লী শেখ আবু নাসের উচ্চ বিদ্যালয় টুঙ্গিপাড়ার একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণ, রাধাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয় কোটালীপাড়া ৪ তলা একাডেমিক ভবন, টুঙ্গিপাড়া পৌর বাস টার্মিনাল, জেলা প্রশাসন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন, ৬তলা বিশিষ্ট পৌর সুপার মার্কেট, কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ, মেরামত এবং নবরুপায়ন, শেখ লুৎফর রহমান গ্রন্থগার ও গবেষণা কেন্দ্র, পূর্ব উত্তর কোটালীপাড়া দারুছুন্নাহ সালেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ৪তলা একাডেমিক ভবন, স্বাধীনতা সদর ডাক বাংলো, পাটগাতী জিসি হতে বাঁশবাড়িয়া জিসি সড়কের ৫০১৪ মিটার চেইনেজে ২২৫ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ, বাশঁবাড়িয়া ঝনঝনিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা মসজিদ কমপ্লেক্স, টুপুরিয়া আরএন্ডএইচ-ধোরার জিপিএস সড়কে ০০ মিটার চেইনেজে ৪৫ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, মাঝবাড়ী আরএন্ডএইচ-রাধাগঞ্জ বাজার সড়কে ৬৭০০ চেইনেজে ৯০ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ।