Search
Close this search box.

স্মার্ট সেনাবাহিনী হবে এটাই কাম্য – সেনাপ্রধান

স্মার্ট সেনাবাহিনী হবে এটাই কাম্য - সেনাপ্রধান

স্টাফ রিপোর্টার – সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্মার্ট সেনাবাহিনী হবে এটাই কাম্য। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে স্মার্ট সেনাবাহিনী হবে। সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে। তারই ধারাবাহিকতায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও। স্মার্ট বাংলাদেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্মার্ট সেনাবাহিনী হবে এটাই কাম্য। সেনাবাহিনীকে আরও স্মার্ট করার জন্য যত জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে, সেগুলো আমরা বাড়াচ্ছি। পাশাপাশি তিনি আধুনিকায়ন ও প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন।

আরও কঠিন প্রশিক্ষণের প্রত্যয় নিয়ে শেষ হলো সেনাবাহিনীর শীতকালীন বহিরাঙ্গন অনুশীলনের চূড়ান্ত মহড়া। অত্যাধুনিক ট্যাংক, এপিসি আর বিভিন্ন অ্যামুনেশনের সমন্বয়ে যুদ্ধ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। আইএসপিআর’র তত্ত্বাবধানে ঢাকা থেকে কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হয় চূড়ান্ত মহড়া দেখাতে। সরজমিন টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় দেখা যায়, কয়েক হাজার সেনা সদস্যের সরব উপস্থিতি। যুদ্ধকালীন সময়ের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধ মহড়া দেখতে গতকাল সকালেই উপস্থিত হন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। বিস্তৃত মাঠজুড়ে তৈরি যুদ্ধ মহড়া স্থান পরিদর্শন করেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে মহড়ার খোঁজ নেন। একপর্যায়ে নিজেই এপিসিতে উঠে যুদ্ধ ময়দান পরিদর্শন করেন। পরে মহড়ায় অংশ নেয়া সাধারণ সৈনিকদের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি।

কুশল বিনিময় করেন। চূড়ান্ত মহড়া শেষে এপিসির ওপর দাঁড়িয়ে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, সাফল্যের মধ্যদিয়ে অনুশীলন শেষ হয়েছে। আমরা অনেক কিছু শিখেছি। অনেক ভুলও হয়েছে। এসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী অনুশীলনে তা শুধরে নিতে হবে। সেনাপ্রধান বলেন, যখন তরুণ অফিসার ছিলাম তখন প্রশিক্ষণের জন্য অনেক কিছুর সীমাবদ্ধতা ছিল। আজ আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। মহড়ায় ট্যাংক, এপিসিসহ নানা ধরনের অ্যামুনেশন ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই সম্ভব হচ্ছে দেশ স্বাধীন হয়েছে বলে। সেনাপ্রধান বলেন, আমাদের মূল দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। এজন্য প্রয়োজন কঠোর অনুশীলন। কঠিন প্রশিক্ষণ সহজ যুদ্ধ এটা আমি সবসময় বলে থাকি। এ সময় তিনি সৈনিকদের কাছে জানতে চান, আপনারা কোনটা চান। সবাই সমস্বরে বলেন- কঠিন প্রশিক্ষণ। পরে মহড়ায় অংশ নেয়াদের সঙ্গে দুপুরের খাবার খান সেনাপ্রধান। বাংলাদেশ সেনবাহিনীর ৩ সপ্তাহব্যাপী পরিচালিত শীতকালীন প্রশিক্ষণ ২০২২-২০২৩ অনুশীলনের এবার নামকরণ করা হয়েছে- নবউদ্যোগ।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশন সফলভাবে এই অনুশীলন পরিচালনা করে। অনুশীলনে সাঁজোয়া বহর, এপিসি’র পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ছত্রীসেনা অংশগ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর আর্মি এভিয়েশনের হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আর্মি কমান্ডো সন্নিবেশ, ইঞ্জিনিয়ার্স কর্তৃক প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং পদাতিক ও অন্য কোরের সমন্বয়ে শত্রু অবস্থানের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। গতকাল সমাপনী মহড়ায় আরও উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান, কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. সাইফুল আলম এবং জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরীসহ সেনাসদরের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারবৃন্দ, অন্য সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, ডিফেন্স জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাংবাদিকবৃন্দ এবং অন্য গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। আইএসপিআর জানিয়েছে, গত ১৯শে ডিসেম্বর শীতকালীন প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে সেনাসদর ও সেনাবাহিনীর সকল ফরমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন হয়। জাতির আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন প্রশিক্ষণের প্রতিপাদ্য হলো ‘যুদ্ধ পারঙ্গমাতা, যুদ্ধোপযোগিতা ও রণপ্রস্তুতি প্রদর্শন’। দেশ সেবায় নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে সরজমিন বাস্তবধর্মী বিভিন্ন সামরিক বিষয়াদি অনুশীলনের মাধ্যমে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নয়ন সাধন করাই এই অনুশীলনের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া এ বছর শীতকালীন বহিরাঙ্গন অনুশীলনটিতে অধিকতর বাস্তবধর্মী ও অভিনব জ্ঞানের প্রতিফলন ঘটানো হয়।

সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন, নতুন কৌশলের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিভিন্ন প্যারা মিলিটারি ফোর্সের সমন্বয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এই অনুশীলনের আয়োজন করা হয়। সবমিলিয়ে সেনাবাহিনীর এবারের শীতকালীন প্রশিক্ষণ ছিল অনেক অভিনব ও বাস্তবধর্মী। সেনাবাহিনীর সকল সদস্য ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে এই শীতকালীন অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শীতকালীন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ফরমেশনসমূহ স্ব-স্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অসহায় ও দুস্থ শীতার্ত মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র ও ত্রাণ বিতরণ, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান ও ওষুধ বিতরণসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশুর বিনামূল্যে চিকিৎসা, পরামর্শ প্রদান ও ওষুধ বিতরণ করে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রেই জনগণের পাশে দাঁড়ায় সেনাবাহিনী। বাস্তবসম্মত ও যুগোপযুগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একটি বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানান সেনাবাহিনী প্রধান।

তিনি বলেন, আমাদের টিএডিএ, বেতন কাঠামো মান্ধাতা আমলের ছিল, সেটা ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। দ্রুতই এটার ফল সবাই ভোগ করবে। এটা একটি প্রক্রিয়ার কথা বললাম, এভাবেই সবক্ষেত্রে ‘ডিজিটালাইজেশনের যে অ্যাডভানটেজ’, সেটা আমরা নিচ্ছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জাতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতটা স্মার্ট করা দরকার, সেটা আমরা করছি। প্রশিক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, শীতকালীন প্রশিক্ষণ আজ শেষ হচ্ছে। আপনারা জানেন যে, এ ধরনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে অনেক কিছু করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, প্রশিক্ষণে জোর দাও। আমরা উনার নির্দেশনা মোতাবেক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, জনগণের আস্থা যদি কোনো বাহিনী অর্জন করতে না পারে, তাহলে সে বাহিনী সাফল্য অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীর কোনো সেনাবাহিনী কোনো যুদ্ধ জয় করতে পারেনি জনগণের সমর্থন ছাড়া। আমাদের বাংলাদেশের মানুষ যাতে সেনাবাহিনীর ওপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখে এবং আমরা যাতে সবসময় তাদের সার্বিক সহযোগিতা পাই সেজন্য আমরা সবসময় জনগণের ভেতরে থাকার চেষ্টা করি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ