Search
Close this search box.

ডিএনসিসিতে মশার জাত নির্ধারনে ল্যাব স্থাপন করা হবে- মেয়র আতিক

স্টাফ রিপোর্টার- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি ডেড কাউন্টির মতো ঢাকাতেও ল্যাব স্থাপন করে মশার জাত নির্ণয় করার উপর গুরুত্ব দিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। মশার ধরন বুঝে কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে মশা নিয়ন্ত্রণ আনতে শীঘ্রই জরিপ ও লারবিসাইডিং বাড়াতে চায় ডিএনসিসি।

ফ্লোরিডায় গিয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে ভাবছে উত্তর সিটি করপোরেশন। এতদিন মশা নিয়ন্ত্রণে ফগিং-এ গুরুত্ব দিলেও এবার জরিপ আর লার্ভিসাইডিংএ বেশি মনোযোগী হওয়ার কথা ভাবছেন তারা।

ঢাকার মতে একই আবহাওয়ার এই মিয়ামির ডেঙ্গুসহ এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশটির অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর কথা জানালেন উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিফুল ইসলাম। মিয়ামিয় বিশেষজ্ঞরাও বলছে মশক নিধনে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে ঢাকাকে।

মিয়ামিতে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে। রাজধানীর ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রীতে উঠানামা করে। মাঝে মাঝে ভারি বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে এডিস বাহিত ডেঙ্গুসহ সব ধরণের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।

দেশে মশা নিয়ন্ত্রণে বহু বছরের পুরোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরের পর বছর ব্যর্থতার বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সেস কমার্শিয়াল ল ডেভলপমেন্টের (সিএলডিপি) আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি দল ফ্লোরিডা সফর করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেই বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র।

মিয়ামি ডেড কাউন্টিতে মশার প্রজনন স্থল খুঁজে বের করতে একটি টিমকে দায়িত্ব দিয়ে থাকে। তারা খুঁজে খুঁজে মশার প্রজনন স্থল থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা ও মশার ডিম সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবে পাঠিয়ে দেয়। ল্যাবে থাকা বিশেষজ্ঞরা সেই মশা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রজাতি পৃথক করে দেন। দেখা যায় এক জায়গায় কিউলেক্স বেশি তো আর এক জায়গা এডিস মশা বেশি। আবার অন্য জায়গায় পাওয়া যায় ইজিপ্ট মশা। এভাবে মশার প্রজাতিত নির্ণয় করা থাকে।

মিয়ামির ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষের দাবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশা রয়েছে। প্রজাতি চিহ্নিত করতে পারলেই মশা নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপ শেষ হয়। মশার ধরন বুঝে পরিমিত ওষুধ স্প্রে করার মাধ্যমে স্ব স্ব প্রজাতির মশা ধ্বংস করা হয়। তারা ফগিংকে গুরুত্ব না দিয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন লার্বিসাইডিংকে। তাদের মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মোট বাজেটের ৮০ ভাগই খরচ হয় লারবিসাইডিং কার্যক্রমে।

তাদের দাবি ফগিং পুরোনো পদ্ধতি। এটি দিয়ে মশা কখনও মরে না। তাই মশা নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয় না। যে কারণে তারা মশার প্রজনন স্থান চিহ্নিত করে সেখানে লার্বিসাইডিং কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা সফর কালে সেখানে ফিল্ড ভিজিট ও কর্মশালায় তথ্য উপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রতিনিধি দলকে হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ডিএনসিসিতে কাজে লাগাতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, আমরা এতো দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসিতে মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই। মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশক মুক্ত রাখতে চাই।

তিনি আরও বলেন, ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্বিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে। আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব।

তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিএলডিপি কর্তৃপক্ষকে মেয়র আতিক ধন্যবাদ জানান। মশক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দিনব্যাপী কর্মশালা ও ফিল্ড পরিদর্শনে সহায়তা করেন দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের অপারেশন ম্যানেজার উসিক উনলু (Isik Unlu PHD ) ও পরিচালক ড. উইলিয়াম ডি পেট্রি (Dr. William D Petrie)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ