মিথুন আশরাফ – আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। আজ যারা বলে আওয়ামী লীগ পালানোর সময় পাবে না, তাদের উদ্দেশ্যে বলি আওয়ামী লীগ এদেশ থেকে পালায় না। বিএনপির নেতারাই এদেশ থেকে পালায়। আওয়ামী লীগ পালানোর সময় পাবে না বিএনপির নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কথা বলেছেন।
রবিবার রাজশাহীর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। মাদ্রাসা মাঠে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জন্য করা এক হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তিনি বলেন, এদেশে জিয়াউর রহমান, এরশাদসহ অনেকেই ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ছাড়া এদেশে কেউ উন্নয়ন করেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল অনেক কথাই বলে। আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। পালিয়ে যায় আপনাদের নেতারাই।
তিনি বলেন, বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। অথচ তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। তাই তাদের মুখে দুর্নীতির কথা মানায় না।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল আমাকে দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরেছিলাম। আবার ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখনো আমি বিদেশে গিয়েছিলাম, আমার ছেলের বউ অসুস্থ ছিল। আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছি, আমি যাব। এই কেস আমি মোকাবিলা করবো। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধু বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।
তিনি বলেন, আজকে যারা বলে পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, আওয়ামী লীগ পালায় না। পালান আপনাদের নেতারা। বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত তাদের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যে নাকি ২০০৭-এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কোনো দিন রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিল, সে কথা কি আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নাই?
তিনি বলেন, ৪০ কোটি টাকা আমরা দেশে নিয়ে এসেছি তাদের পাচার করা টাকা। এর জবাব কি তারেক দিতে পারবে? আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না। আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ জনগণকে দিতে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ পায়। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। দেশকে আমরা উন্নত করতে চাই।
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা করোনাকালীন সময়ে বিনা পয়সায় করোনা টেস্ট করা ও ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছি। আমরা ১ কোটি মানুষের জন্য টিসিবি কার্ড করে দিয়েছি। এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, আওয়ামী লীগ জনগনের জন্য কাজ করে। আমাদের দেশের একজনও গৃহহীন থাকবে না। কোনো মানুষ না খেয়ে থাকবে না, সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ কাজ করছে।
বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুন দিয়ে গাড়ি পোড়ানো আর মানুষ হত্যা করাই হলো বিএনপির রাজনীতি। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ও জনগণের ভোট চুরি করে। বিএনপির রাজনীতি হলো হত্যা, লুটপাট আর দুর্নীতি। আমার মা বাবা ও ভাইদের যারা হত্যা করেছে খালেদা জিয়া তাদের সংসদে এনে বসিয়েছেন।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ দেশে আমার মা বাবা ও ভাইদেরসহ পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। দেশে একটা সময় আমার মা-বাবার হত্যার বিচারও চাওয়ার অধিকার ছিল না। আমরা ক্ষমতায় এসে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমি ওয়ান ইলেভেনের সময় বিদেশে গিয়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আবার দেশে ফিরে এসেছি। তাঁর নেতৃত্বে সরকারের বর্তমান আমলে দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকেও আমি রাজশাহীতে এসে ২৫টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি। এগুলো রাজশাহীবাসীর জন্য আমাদের সরকারের উপহার।
জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশের এ উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতেও এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা করোনাকালে সবাইকে বিনা পয়সায় টিকা দিয়েছি, যা উন্নত দেশগুলোও দিতে পারেনি।
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এ অবস্থায় আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিরলসভাবে কাজ করছি। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি নিয়ে আমরা এক কোটি লোককে কার্ড দিয়েছি। আমরা জনগণকে যে ওয়াদা দেই তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। আজকের বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হয়েছে। আগামীতে এ দেশ আরও উন্নত হবে।
আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন হবে। ওই নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আগামীর নির্বাচন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের নির্বাচন।
রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে আওয়ামী লীগের জনসভায় নৌকায় ভোট চাইলেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ওয়াদাও করান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা দেয়, তা রক্ষা করে। বিএনপি জঙ্গিবাদ ও লুটপাটসহ নানা অপকর্মে জড়িত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ শান্তিতে থাকে।
রবিবার বিকাল তিনটার দিকে জনসভায় উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী। জনসভায় উপস্থিত হয়ে ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন ও ছয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এসময় দেশ ও জাতীর মঙ্গল কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এর আগে দুপুরে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জনসভা শুরু হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন। জনসভায় আসার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারদায় পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।