মিথুন আশরাফ – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাহিত্যচর্চা বেশি হলে যুবসমাজ মাদক ও জঙ্গিবাদের দিকে যাবে না। বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে আরও ব্যাপকভাবে পরিচিত করাতে অনুবাদের ওপর জোর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তরুণ প্রজন্মকে যত বেশি সাহিত্যের দিকে আনতে পারবো, খেলাধুলা ও সংস্কৃতির দিকে আনা যাবে, তারা ততোটা সৃজনশীল হবে। মাদক ও সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে। এখন সবাই বই পড়তে চাই না, তাই অডিওর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদিও বই পড়ার তৃপ্তি আলাদা। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, সবগুলো বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে হবে। তাহলেই সারাবিশ্ব আমাদের কথা জানবে। সারাদেশে কালচারাল সেন্টার করা হয়েছে। আমরা জেলায় জেলায় বইমেলা করছি। এভাবে আমাদের বিভিন্ন দেশেও বইমেলা করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। কূটনৈতিকদের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটা করা প্রয়োজন। এতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে।
এর আগে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টার দিকে তিনি বাংলা একাডেমিতে উপস্থিত হন তিনি। ভাষার মাসের সবচেয়ে বড় কর্মযজ্ঞ মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা শুরু হলো। বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে ঐতিহ্যবাহী এই বইমেলার উদ্বোধন করেন। এছাড়া, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত সাতটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনসহ ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অমর একুশে বইমেলা ও অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৫ জন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ পুরস্কার পেয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, খাদ্য-কৃষিতে ভর্তুকি দিলেও গ্যাস-বিদ্যুতে বিত্তবানদের সুবিধা দেওয়া হবে না।
মূল মেলা অনুষ্ঠিত হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। প্রতিবারের মতো এবছরও বাংলা একাডেমি মাঠে থাকবে পরিচিত সব প্রতিষ্ঠানের স্টল। তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরেই থাকবে মেলার প্রধান কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশকরা তাদের স্টল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করেছেন। প্রকাশকরা জানিয়েছেন ৮০ শতাংশ স্টলের নির্মাণকাজ শেষ। বাকিটুকু শেষ হতে হয়তো আর দুই-তিন দিন লাগবে। তাবে এতে মেলার আকর্ষণ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
করোনা মহামারির কারণে বিগত দুই বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হতে পারেনি। সামাজিক দূরত্বের মতো কোভিড-১৯ – এর নিয়মগুলোর বাধ্যবাধকতা এখন না থাকায় এ বছরের মেলা ঐতিহ্যবাহী ১ ফেব্রুয়ারি তারিখেই শুরু হয়েছে।
২০২০ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী সশরীরে মেলার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২ প্রদান করেন এবং সাতটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মিলে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায় মেলা হবে।
এবারের বইমেলার জন্য ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট (স্টল) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৭৬টি স্টল। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি স্টল এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার বইমেলার প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
মেলায় প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চারটি প্রবেশপথ ও চারটি প্রস্থান পথ দিয়ে দর্শক, ক্রেতা ও পাঠকেরা চলাচল করতে পারবেন। তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দর্শনার্থীরা সকাল ৮টায় মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন এবং রাত সাড়ে ৮টার পর সব প্রবেশপথ বন্ধ থাকবে।
বাংলা একাডেমির তিনটি প্যাভিলিয়ন ও শিশু-কিশোর উপযোগী প্রকাশনা বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে বলে জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে ‘শিশুপ্রহর’।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে স্থানান্তর করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ১৫৩টি স্টল ও ৫টি উন্মুক্ত স্থান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারের বইমেলাতেও চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ও কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। এসব পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা হবে মেলার শেষ দিন।
গতবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের স্থানটি এবারের মেলাতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে এই জায়গাটি এবার নামাজের জন্য নির্দিষ্ট স্থান, শৌচাগার ও খাবারের দোকান দেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারের মেলায় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশের পক্ষ থেকে বই কেনায় ছাড় থাকবে।
এবারের মেলায় নতুন পুরোনো ১৩৬টি বই প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি। প্রথম দিন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী: পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘শেখ মুজিবুর রহমান রচনাবলী’, ‘আমার দেখা নয়া চীন: পাঠ বিশ্লেষণ’, ‘কারাগারের রোজনামচা: পাঠ বিশ্লেষণ’ এবং প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ বইয়ের ইংরেজি অনুবাদগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আত্মজীবনী ‘আমার জীবন, আমার রাজনীতি’ বইটির মোড়ক উন্মোচন হবে।
অমর একুশে বইমেলা কমিটির সম্পাদক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রকাশক ও মেলাপ্রেমীদের পরামর্শ ও চাহিদার কথা বিবেচনা করে আমরা স্টল ও প্যাভিলিয়ন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রবেশ ও প্রস্থান পয়েন্টে কিছু পরিবর্তন এনেছি। পূর্ববর্তী পদ্ধতি পরিবর্তন করা হচ্ছে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে ৪৮৯টি স্টল এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে দর্শনার্থীরা যেকোনো কোণ থেকে পুরো মেলার মাঠ দেখতে পারেন।