স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফল ও দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্তে মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার স্থানে অটল থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে সংসদে স্মৃতিচারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংসদে দেওয়া এবারের ভাষণটি রাষ্ট্রপতির শেষ ভাষণ।
বুধবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে এই স্মৃতিচারণ করেন। পরে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ সংসদে ভাষণ দিয়েছেন, তাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়—রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই ভাষণ বোধহয় তার শেষ ভাষণ। কারণ, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেউ পর পর দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি থাকতে পারেন না।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত প্রাণবন্তভাবে ভাষণ দিয়েছেন। লিখিত ভাষণে তিনি সরকারের উন্নয়নের কাজগুলো দক্ষতার সঙ্গে বলে গেছেন।
রাষ্ট্রপতির কর্মময় জীবন ধারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতির ছাত্রজীবন শুরু হয়েছিল রাজনীতির মধ্য দিয়ে। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজনীতি শুরু করেন এবং খুব অল্প বয়সেই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সাত সাতবার তিনি সংসদে নির্বাচিত ছিলেন।
তিনি বলেন, এই সংসদে তিনি বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন, তারপরে তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সময়ের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছেন। আমি সব সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দন জানাই। রাজনৈতিক জীবনে তিনি অত্যন্ত সফলতা অর্জন করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত জেল-জুলুম সহ্য করতে হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে সব ক্ষেত্রে তার ভূমিকা রয়েছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন।
তিনি বলেন, আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার বা স্পিকার থাকাকালে এই সংসদকে অত্যন্ত প্রাণবন্ত রাখতেন। তার কথাবার্তা সব কিছুতেই প্রাণের যোগ ছিল। স্পিকার হিসেবে তিনি বিরোধী দলকে সময় দিতেন এবং তাদেরও সমর্থন পেয়েছেন। যেহেতু তার সময়টা শেষ হয়ে যাচ্ছে, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের।
তিনি বলেন, আমি দেশে আসার পর তার সঙ্গে দীর্ঘদিন একসাথে রাজনীতি করেছি। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা-জ্ঞান—সেটাও আমরা পেয়েছি।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি অত্যন্ত সফল ও দক্ষতার সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনে নানারকম ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার স্থানে অটল থেকেছেন। প্রতিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করেছেন। যার জন্য এ দেশের স্থিতিশীলতা এসেছে। ২০০৯ থেকে আজকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ আছে। যদিও এর ভিতর অনেক ঘাত-প্রতিঘাত-অগ্নিসংযোগ অনেক কিছু হয়েছে। তারপরও কিন্তু আমাদের উন্নয়নের চাকা অগ্রগতি লাভ করেছে। ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছি।
তিনি বলেন, অনেক চড়াই-উতরাই আমাদের পার হতে হয়েছে, কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার জায়গায় স্থির থেকে প্রতিটি অবস্থা মোকাবিলা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশের মানুষকে।
সংসদ নেতা বলেন, আমি জানি তিনি আর রাষ্ট্রপতি থাকবেন না। তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। তার জীবন যে সফল, এজন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।