স্টাফ রিপোর্টার – দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনয়নপত্র দাখিলের পর বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনও প্রতিক্রিয়া নাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।
মনোনয়নপত্র দাখিলের পর সাংবাদিকদের সামনে মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার বক্তব্যের পর সাংবাদিকরা সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। তবে ওবায়দুল কাদের তাতে বাধা দেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি (সাহাবুদ্দিন চুপ্পু) প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন না, এটা ঠিক না। এসময় তার কথার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন ড. হাছান মাহমুদও। পরে ভবন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় একের পর এক অনুরোধের মধ্যে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছা। এখন কোনও প্রতিক্রিয়া নাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছা।
এরআগে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার সকালে গণভবনে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। এসময় বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাও উপস্থিত ছিলেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ লিটন চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান, দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে নিয়ে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে মনোনয়ন জমা দেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নে প্রস্তাবক হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সমর্থক হিসেবে ড. হাছান মাহমুদ স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে সে সময় ক্ষমতাদখলকারীরা। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও তখন কারাবরণ করতে হয়।
পেশায় আইনজীবী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়, যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়। দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক পুত্রসন্তানের বাবা। তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।