Search
Close this search box.

শান্তির দেশ গড়তে চাই – প্রধানমন্ত্রী

শান্তির দেশ গড়তে চাই - প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে গৌরবের সঙ্গে কাজ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে ॥ আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না ॥ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি মাটি ও মানুষ দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলব, আমি সেই কথা বিশ্বাস করি ॥ বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না আসে ॥ আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জণগণের পাশে আছে ॥ যেকোন দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয় বিদেশেও

মিথুন আশরাফ – আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রুপান্তরিত করতে চাই। এ জন্য আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারও সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। এ সময় বহিঃশত্রুর আক্রমণ মোকাবিলায় উপযুক্ত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও সেবা দিয়ে যাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে গৌরবের সঙ্গে কাজ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, করোনা মহামারি থেকে আমরা সফলভাবে বের হয়ে আসতে পেরেছি। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। উন্নত দেশগুলোও মন্দার কবলে পড়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটি অনেক ঊর্বর। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছিলেন আপনাদের তো কিছুই নেই কীভাবে দেশকে গড়ে তুলবেন। তিনি বলেছিলেন আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। আমি মাটি ও মানুষ দিয়ে বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আমি সেই কথা বিশ্বাস করি। আমি চাই প্রত্যেকটা নাগরিক যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না আসে।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বহিরাগত শক্তির যেকোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তোলা হচ্ছে। আমরা আমাদের দেশকে একটি শান্তিপূর্ণ দেশে রুপান্তরিত করতে চাই। তাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী সবসময় দেশ ও জণগণের পাশে আছে। যেকোন দুর্যোগে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী তাদের পাশে দাঁড়ায়, শুধু দেশে নয় বিদেশেও। এ সময় সিরিয়া ও তুরস্কে উদ্ধার কাজ চালানো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, যখনই বন্ধু প্রতীম কোন দেশে দুর্ঘটনা ঘটে তখনই আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে যায় এবং উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ ও সেবা দিয়ে থাকে। পাশাপাশি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী শান্তিরক্ষী বাহিনী গৌরবজনকভাবে দায়িত্ব পালন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে যাচ্ছে। তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সাম্প্রতিক তুরস্ক ও সিরিয়ার ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্ধার কাজে সফলভাবে অংশগ্রহণের উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট হৃদয়ের খুব কাছের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে শহীদ তার দুই ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এবং লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল এই রেজিমেন্টের সদস্য ছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তাই ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পুনর্মিলনীতে যোগ দেয়া একদিকে আমার জন্য বেদনাদায়ক, অন্যদিকে আনন্দের।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়নে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি মাওয়া-জাজিরায় শেখ রাসেল সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মিঠামইন, রাজবাড়ী ও ত্রিশালে নতুন সেনানিবাস নির্মাণের কাজ চলছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আর্মি এভিয়েশন ফরওয়ার্ড ঘাঁটি এবং লালমনিরহাটে এভিয়েশন স্কুল নির্মাণের কাজও চলছে।

প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সরকার সেনাবাহিনীতে নতুন কম্পোজিট ব্রিগেড ও প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড যুক্ত করেছে। প্রতিটি বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, বিভিন্ন দেশে খাবারের দাম অত্যধিক বেড়েছে এবং খাবার পেতেও সমস্যা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি, সেটা সত্য। এটি আমাদের অব্যাহতও রাখতে হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত যুদ্ধ থামে; এবং অর্থনৈতিক মন্দা থেকে বিশ্ব মুক্তি পায়। বাংলাদেশে যেন না হয়, সে জন্যই আমাদের কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশে দারিদ্রের হার ৪০ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। মাথা পিছু আয় বেড়েছে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে এক হতেও তিনি আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে রেজিমেন্টের একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী সালাম গ্রহণ করেন এবং খোলা জীপে চড়ে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ তাঁর সাথে ছিলেন। পরে তিনি একটি মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও প্রত্যক্ষ করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ