স্টাফ রিপোর্টার – ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি গ্রেফতার হয়েছেন। তার স্বামী রাকিব সরকার পলাতক রয়েছেন। সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার পর শনিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাহিকে গ্রেফতার করা হয়। দুপুর দেড়টার দিকে তাকে গাজীপুর কারাগারে পাঠানো হয়।
মাহিয়া মাহিকে গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নেওয়া হয়। পরে মাহিয়া মাহিকে ৭ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। তবে আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে কারগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুক্রবার রাতে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলা করেন বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া।
এর আগে, স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া মাহিয়া মাহি শুক্রবার ভোরে সৌদি আরবের মক্কা শহর থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন। এর কিছু সময় পর রাকিব সরকার ও মাহিয়া মাহি ফেসবুক লাইভে এসে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে গাড়ির শোরুম দখল করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।
গাজীপুরে দুটি মামলা হয়। ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে শুক্রবার রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এ ছাড়া জমি দখলের অভিযোগে আরেকটি মামলা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা পুলিশকে বিতর্কিত করার মিশনে নেমেছেন। ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
পুলিশের কমিশনার জানান, সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে মাহিয়া মাহি সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তার স্বামী দেশে ফেরার কথা থাকলেও তিনি ওই ফ্লাইটে আসেননি।
মাহি দাবি করেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেই শোরুমে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শোরুমের বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালার কাচ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছে। দুর্বৃত্তরা তার অফিসকক্ষ তছনছ করে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে।
ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন মাহি। ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন এই নায়িকা। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ। এই মামলায়ই গ্রেফতার করা হলো মাহিকে।
ইমিগ্রেশন অফিসাররা জানান, বোরকা পরে এবং হুইল চেয়ারে করে বিমান থেকে নেমেছিলেন মাহি। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রেফতার হতে পারেন, এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি এমন ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। তবে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে পারেননি মাহি। ইমিগ্রেশন শেষে অফিসাররা তাকে তুলে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে।
সৌদি আরব থেকে বিজি ৩৩৬ ফ্লাইটে জেদ্দা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন মাহি। ৪ নম্বর বোর্ডিং ব্রিজের ৬ নম্বর বেল্টে তার লাগেজ ছিল। মামলায় প্রধান আসামি রকিব সরকার এবং ২ নম্বর আসামি মাহিয়া মাহি।
শুক্রবার মধ্যরাতে সৌদি আরব থেকে ফেসবুক লাইভে মাহি বলেন, ‘হতে পারে আমরা দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার হতে পারি। যাই হোক হবে, আমরা সব ফেস করব। আপনারা সবাই সত্যের সঙ্গে থাকবেন। পুরো দেশবাসী আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
নায়িকার ভাষ্য, ‘জায়গা জমির ব্যাপারে ফয়সালা করবে আদালত। পুলিশ কেন জমির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে? তারা কেন সনি রাজ শো-রুমে ঢুকে আমাদের লোকজনদের ধরে নিয়ে গেল? কি উদ্দেশে আমাদের সবাইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদেরকে গ্রেফতার করবে। আমি যদি অন্যায় করে থাকি, ভুল করে থাকি দেশের প্রচলিত আইনে আমার বিচার হবে, শাস্তি হবে। আমি সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে পুলিশ সদস্যদের এমন প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। দেখা যাক কি হয়, আল্লাহ ভরসা।’