স্টাফ রিপোর্টার – বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘সংসদে বঙ্গবন্ধু’ ও ‘মুজিববর্ষ বিশেষ অধিবেশন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর ক্ষমতা না দেওয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১-এ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই বঙ্গবন্ধু জাতিকে উপহার দেন সংবিধান। এরপর ১৯৭৩-এর ৭ মার্চ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান – এটা বিশ্বে বিরল।
বাংলাদেশটা কীভাবে চলবে সেই দিকনির্দেশনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ভাষণগুলোতে দিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্মের জন্য অমূল্য সম্পদ।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫০ বছরে আমাদের যে প্রজন্ম বা তার পরবর্তী প্রজন্ম, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই ভাষণগুলো জানা, তাতে বাংলাদেশটাকে বোঝা, মানুষের মানুষের অবস্থাটা জানা, তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতি, সবকিছু জানার একটা সুযোগ পাবে। বাংলাদেশটা কীভাবে চলবে সেই দিক-নির্দেশনা তিনি তার ভাষণে দিয়ে গেছেন। কাজেই এটা আমাদের জন্য একটা অমূল্য সম্পদ।
সরকারপ্রধান বলেন, সেই সংসদ অধিবেশনে (স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে) তিনি যে ভাষণগুলো দিয়েছেন, পরবর্তীতে সব ভাষণগুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসা, যেটা আমি মনে করি আমরা যারা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসি, এটা আমাদের জন্য যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে সংবিধান রচনার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রশংসা করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি অর্থাৎ যারা জাতীয় পরিষদের সদস্য এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এই উভয় সদস্যদের নিয়ে জাতির পিতা গণপরিষদ গঠন করে, সেই পরিষদে একটি কমিটি করে দেন, আমাদের সংবিধান রচনার জন্য। এটা বোধ হয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল একটা ঘটনা। মাত্র ৯ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে তিনি বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন।
বৈঠকে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মনে হয় পৃথিবীর মধ্যে বিরল একটি ঘটনা যে মুক্তিযুদ্ধের পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ সংবিধানটি পৃথিবীতে বোধহয় সর্বশ্রেষ্ঠ সংবিধান হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বাংলাদেশের মানুষকে বোঝা ও জানা এবং তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি সবকিছু জানার একটা সুযোগ পাবে এ বইয়ের মাধ্যমে। বিশেষ এ অধিবেশন আগামী ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে কার্য-উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল যাত্রা শুরু করেছিল স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ। কালের পরিক্রমায় এই সংসদ পেরিয়েছে প্রতিষ্ঠার পাঁচ দশক। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয় বিশেষ অধিবেশনের কার্যক্রম। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী সেশনে যোগ দেন সংসদ সদস্যরা।
প্রথম দিনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিদেহীদের আত্মার শান্তি কামনায় করা হয় মোনাজাত, কমিটির রিপোর্ট উপস্থাপন এবং আইন প্রণয়নের মতো স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর পর অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার।
অধিবেশনের আগে একাদশ জাতীয় সংসদের কার্য-উপদেষ্টা কমিটির ১২তম বৈঠক হয়। এ সময় সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত বিশেষ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতাসহ কমিটির সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, ৬ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বিশেষ এই অধিবেশন। আর শুক্রবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তব্য দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ ছাড়া শনিবার সংসদ নেতা সাধারণ প্রস্তাব উত্থাপন করলে তার ওপর আলোচনা করবেন আইনপ্রণেতারা।
কমিটির সদস্য বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।
জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। ৭ এপ্রিল বিকাল ৩টায় এবং ৮ ও ৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় অধিবেশন শুরু হবে। এ অধিবেশনে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী’ উপলক্ষে ৭ এপ্রিল বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে স্মারক বক্তৃতা দেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বৈঠকে জানানো হয়, এ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য ২০টি এবং অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৪৪৯টি প্রশ্নসহ মোট ৪৬৯টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে, বিধি-৭১ এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া গেছে ৩৫টি। অধিবেশনে উত্থাপনের জন্য আটটি সরকারি বিলের নোটিশ পাওয়া গেছে। গত অধিবেশনে অনিষ্পন্ন ৯টি বিলসহ ১৭টি বিলের মধ্যে কমিটিতে পরীক্ষাধীন সাতটি, পাসের অপেক্ষায় একটি এবং উত্থাপনের অপেক্ষায় ৯টি। বেসরকারি সদস্যদের বিলের কোনও নোটিশ পাওয়া যায়নি।