স্টাফ রিপোর্টার – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন ছিল তখনই দেশের উন্নয়ন হয়েছে; সেনা শাসন বা সেনা সমর্থিত সরকারের সময়ে দেশের অগ্রগতি সাধিত হয়নি, এটা মানুষকে বুঝতে হবে। রবিবার গণভবনে জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিলের (এনটিসি) অষ্টম সভায় বক্তব্য দানকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী প্রজন্ম যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন না করা দলগুলোর বৈরী মনোভাবের কারণে বাধা-বিপত্তি আসবে। সেসব অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে।
দেশ পরিচালনায় নীতি ও আদর্শ ধরে রাখার কারণে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সহজ হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশাসন পরিচালনায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নীতি-আদর্শ ধরে রেখে কাজ করেছি। এরই ফলস্বরূপ দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে আমাদের। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে কাজ করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীরা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ এগিয়ে গেছে; এখন আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নির্বাচনী ওয়াদা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। এ পথে আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এখন গ্রামে বসেও ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল মিলছে।
তিনি আরও বলেন, এবার আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। এ দেশ গড়তে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলের বিকল্প নেই। তাই সামনের দিনে আমাদের প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলায় গুরুত্ব দিতে হবে। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠনের পর থেকে প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। এ পর্যন্ত প্রায় লক্ষাধিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দেশে-বিদেশে সল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, করোনার পর যুদ্ধ পরিস্থিতি পেরিয়ে এখনও অর্থনৈতিক অগ্রগতির যে ধারা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ তা যেন অব্যাহত থাকে। নিজ টাকা পদ্মা সেতু নির্মাণ এদেশের মর্যাদা বদলে দিয়েছে এবং তা ধরে রাখতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা পুনরুল্লেখ করে এর জন্য প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি গড়ে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের কী কী করণীয়, কীভাবে আমরা পথ চলতে পারি, কীভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, জাতীয় প্রশিক্ষণ কাউন্সিল (এনটিসি) সে বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসবে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেকোনো জাতিকে উন্নত করতে হলে প্রশিক্ষণটা একান্তভাবে অপরিহার্য। পৃথিবী পরিবর্তনশীল, এখন হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি, শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি, রাস্তা-ঘাটসহ দেশের সার্বিক উন্নতি হয়েছে। সেইসঙ্গে আমাদের জনগোষ্ঠীও যেন আগামী দিনের পথচলায় সমানভাবে প্রশিক্ষিত হয়, সেভাবে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত। সেভাবে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। যেকোনো বিষয়ে আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। এর জন্য উপযুক্ত জনশক্তিও আমাদের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি, যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হবে। এর জন্য আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মী লাগবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পর যারা আসবে, তারা যেন বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে, গণতান্ত্রিক ধারাতে যেন অব্যাহত থাকতে পারে, সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আমরা যদি কৃষি উৎপাদন করি, আমরা অনেক বেশি খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে পারব। সংরক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি বাজারজাত করা, এমনকি রপ্তানি পণ্য হিসেবে সেগুলো সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হবে। এটা আমি বিশ্বাস করি।
দেশের দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমরা চাই জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন এবং দেশকে উন্নত করতে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে। স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামীর জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষিত হতে হবে। আর প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। এ জন্য আমাদের উপযুক্ত জনবল দরকার।