স্টাফ রিপোর্টার – ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে রবিবার দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে রবিবার রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় তাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। বিএনপি মহাসচিব গণমাধ্যমে সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই সাক্ষাৎ করেছি। অনেকদিন ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এজন্যই হঠাৎ করে দেখতে যাওয়া। তার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়েছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামীর নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনা হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ফখরুলের সাক্ষাতের বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ তৈরী করেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রতি মাসেই একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সাক্ষাতে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নেন। সেই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে দল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে চেয়ারপারসনকে তা অবহিত করেন। তার ধারাবাহিকতায়ই রবিবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মহাসচিব। এ ছাড়া কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। নানা বিষয় নিয়ে কুশল বিনিময় করতেই দলের শীর্ষ এই দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাৎ হয়।
বিএনপি মহাসচিব এরআগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা: জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা মামলায় চার্জ গঠন ও বিচার শুরু করায় ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিরোধী দলকে নির্মূল করার নীল নকশার অংশ হিসেবে ১/১১ অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগ সাজশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শত্রুরা পরিকল্পিত ভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক পরিবার শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান জোবায়দা রহমান এবং এই জিয়া পরিবারের সকল সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, প্রহসন মূলক বিচার ও ফরমায়েসী রায় দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার হীন চক্রান্ত করে আসছে। সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা মামলার বিচার কাজ শুরু করার লক্ষ্য হচ্ছে তারেক রহমান ও ডা: জোবাইদা রহমানের রাজনীতির বাইরে রাখা। প্রকৃত পক্ষে অবৈধ সরকার বাংলাদেশকে গণতন্ত্রহীন একটি এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। জিয়া পরিবারেরই নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, গণতন্ত্রকামী বিরোধী দলের প্রায় ৪০ লক্ষ নেতা-কর্মী ও সমর্থনকারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও গায়েবী মামলা, গ্রেফতার, কারাগারে নির্যাতন, হত্যা, গুম ও খুনের মাধ্যমে সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করছে। লক্ষ্য, দেশে কর্তৃত্ববাদী এক নায়েকতান্ত্রীক ফ্যাসীবাদকে চিরস্থায়ী করা।
মির্জা ফখরুল বলেন, তারেক রহমান ও ডা: জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত জনগণ গ্রহণ করবেনা। জনগণের ঐক্য ও দূর্বার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারকে বাধ্য করতে হবে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বন্দী সকল নেতা-কর্মীর মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ডা: জোবায়দা রহমানসহ সকল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রুজুকৃত মামলা প্রত্যাহার, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে, নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পার্লামেন্ট ও জনগণের সরকার গঠন করতে এটাই এই সময়ে সারাদেশের জনগণের দাবী। সকল রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং জনগণকে এই লক্ষে ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাই।
বঙ্গবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একই সঙ্গে অবৈধ সরকার প্রধান শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রীদের বিএনপিকে দোষারোপ করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হলো। অবাধ, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারন উদঘাটন না করে বিরোধী দলের প্রতি আঙ্গুল তোলা ‘উদোর পিন্ডে বুধোর ঘাড়ে’ চাপানোর কৌশল। অগ্নিকান্ড গুলোর প্রতিটাই এই অবৈধ সরকারের ব্যর্থতার কারনে সংঘঠিত হচ্ছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর ও সংগঠন গুলোর তদারকির অভাব, সীমাহীন উদাসীনতা এবং দূর্নীতির কারনেই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারন করেছে। অন্যদিকে জনগণকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপকৌশল মাত্র। অবিলম্বে দোষারোপ পরিত্যাগ করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত কারন নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।